ঢাকায় আহত ৬ হাজারের বেশি, আসামি দুই লাখের বেশি
২৯ জুলাই ২০২৪প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এসব রোগী ১৬ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে হাসপাতালে গেছেন৷
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলো জানায়, তাদের প্রতিনিধিরা ২৩ থেকে ২৭ জুলাই রাজধানীর মোট ৩৮টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ এর মধ্যে সরকারি হাসপাতাল ৯টি, বাকি ২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল৷
বেশি মানুষ হাসপাতালে গেছেন ছররা গুলি, রাবার বুলেট বা বুলেটবিদ্ধ হয়ে৷ এছাড়া ইটপাটকেল ও লাঠি বা রডের আঘাতে আহত হয়ে কিছু মানুষ হাসপাতালে গিয়েছিলেন৷ আবার কেউ কেউ গেছেন কাঁদানে গ্যাসের কারণে অসুস্থ হয়ে৷
সংঘর্ষে আহত সবচেয়ে বেশি মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতালে৷ ২৩ জুলাই হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, এই হাসপাতালে ১৭ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৯ জন চিকিৎসা নেন৷ এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ছিলেন ২৩১ জন৷ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় ৫৩৭ জনকে৷ অর্থাৎ এই হাসপাতালে আসা ৪২ শতাংশ রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসার দরকার ছিল৷
২৩ জুলাই বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, ওই প্রতিষ্ঠানে মোট ১ হাজার ৭১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন৷
১৫০ মৃত্যুর বিশ্লেষণ
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী বিক্ষোভ-সংঘর্ষে বেশি মৃত্যু হয়েছে শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষের৷ নিহত ব্যক্তিদের ৭৫ শতাংশ শিশু, কিশোর ও তরুণ৷ হাসপাতাল, স্বজন ও মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তিদের সূত্রে সংঘর্ষ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ এর মধ্যে বয়স, পেশা ও আঘাতের ধরন এবং কোন এলাকায় আহত অথবা নিহত হয়েছিলেন, তার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে ১৫০ জনের৷ এর মধ্যে ১১৩ জন শিশু, কিশোর ও তরুণ৷
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিহতদের বেশির ভাগের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল৷ ছররা গুলি বা প্যালেট, রাবার বুলেটের ক্ষতচিহ্ন৷ অন্যান্য আঘাত কম৷ অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত হয়েছে, তবে প্রতিবেদন তৈরি হয়নি৷ অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন৷
বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিহতদের মধ্যে ১৯ জন শিশু ও কিশোর৷ এর মধ্যে চার বছর বয়সি শিশুও রয়েছে৷ ১৮ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে ৯৪ জন৷ ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সি ২১ জন৷ ৪০ বা এর বেশি বয়স ১৬ জনের৷
১৫০ জনের মধ্যে দোকান, হোটেল, বিক্রয়কেন্দ্র ইত্যাদির কর্মী ২৫ জন, দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকার ১৬ জন, দিনমজুর ও সমজাতীয় পেশায় রয়েছেন ১১ জন, গাড়ি, ট্রাক, রিকশা-ভ্যানচালক ও সহকারী ১৩ জন এবং পোশাক কারখানার শ্রমিক ও কর্মী ৫ জন৷ চাকরিজীবী ও অন্যান্য পেশায় রয়েছেন ২৭ জন৷ এর মধ্যে একজন চিকিৎসক৷
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, শ্রমজীবী মানুষেরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য আর্থসামাজিক কারণে বিক্ষোভে নেমেছিলেন৷ বাংলাদেশে প্রায় দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতি চড়া, ১০ শতাংশের কাছাকাছি৷ নিহতের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য ও একজন আনসার সদস্যও রয়েছেন৷ সাংবাদিক মারা গেছেন চারজন৷
ঢাকায় আসামি ২ লাখের বেশি
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হয়েছে প্রায় ২০০ মামলা৷ এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে দুই লাখ ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে, যাদের অধিকাংশই অজ্ঞাত৷
প্রায় সব মামলাই পুলিশের দায়ের করা৷ নথি থেকে জানা যায়, অন্তত ১৬টি মামলার আসামি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার মানুষ৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানায় গতকাল পর্যন্ত ২২৯টি মামলা হয়েছে৷ গত ১৭ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১৭৮টি মামলা সংক্রান্ত নথি হাতে পেয়েছে ডেইলি স্টার৷ এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৪ জন৷ এর মধ্যে নামীয় আসামি মাত্র ১ হাজার ৩১০ জন৷ বাকি ৫১টি মামলায় কতজন আসামি তা জানা যায়নি৷
মামলায় অজ্ঞাত আসামি মানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাকে খুশি তাকে গ্রেপ্তারের সুযোগ থেকে যাওয়া৷ পুলিশ ৬০টি মামলায় কোনো আসামির নাম বা নম্বর উল্লেখ করেনি এবং অন্তত দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০ হাজার জনকে আসামি করেছে৷ এই দুই মামলার একটি হয় গত ১৮ জুলাই মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সহিংসতার ঘটনায়৷ অপরটি গত ২১ জুলাই আজিমপুরে নাশকতার ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা করা হয়৷ আসামিরা অজ্ঞাতনামা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী৷
গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৯ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ৷ এছাড়া একটি মামলার আসামি আট হাজার, দুটি মামলায় সাত হাজার, ছয় হাজার আসামির বিরুদ্ধে সাতটি ও পাঁচ হাজার আসামির বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়েছে৷ আসামিদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমায়েত, দাঙ্গা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা এবং সম্পদের ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
১৭ জুলাই থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে গতকাল অন্তত ১৫৮টি মামলায় গতকাল ৯৮ জনসহ ২ হাজার ৫০৬ জনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ৷
১০ দিনে বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি অর্ধেকে নেমেছে
স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক পণ্য আমদানি এবং ২০০ থেকে ৩০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়৷ কিন্তু গত ১০ দিন ধরে এই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে৷
বেনাপোলের ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে এই তথ্য জানিয়েছেন৷ তিনি জানান, বর্তমানে আমদানি ট্রাকের সংখ্যা কমে ২০০ থেকে ৩০০ ও রপ্তানি কমে ৫০ থেকে ১০০ ট্রাকে এসেছে৷
এপিবি/এসিবি (দৈনিক প্রথম আলো/ডেইলি স্টার বাংলা)