সোয়ানকর্মীদের কান্না
২৪ জুলাই ২০১৫ঈদ মানেই আনন্দ, তবে সে আনন্দ যেন সবার জন্য নয়৷ বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের বড় একটা অংশের জন্য প্রতি বছরই ঈদ আসে প্রতারিত হবার শঙ্কা নিয়ে৷ পাওনা বেতন-বোনাস যথানিয়মে তাঁদের হাতে আসে না৷ আন্দোলনে নামতে হয়৷ দাবি আদায়ে যত দেরি ক্ষোভ তত বাড়ে৷ রাস্তায় মিছিল এবং এক পর্যায়ে ক্ষোভে ভাঙচুরে নেমে পুলিশের লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তার, নির্যাতনই জোটে তাঁদের৷
গেল ঈদ-উল-ফিতরে সার্বিক পরিস্থিতি আগের কয়েক বছরের তুলনায় ভালোই ছিল৷ বিজিএমইএ জানিয়েছে, একটি ছাড়া সব পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ঈদের আগেই পরিশোধ করা হয়েছে৷ এই ‘সব' কি সত্যিকারের ‘সব'? কাজির অনেক গরুই কিন্তু কিতাবে থাকে, গোয়ালে নয়! কিছু কারখানায় ঈদের আগে বেতন-বোনাস একেবারেই দেয়নি, কোনো কোনোটিতে আংশিক পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে – এমন খবরও কিন্তু সংবাদমাধ্যমে এসেছে৷
তবে ঈদের আগে প্রায় সব কারখানায় বেতন-বোনাস হওয়াটাও খুব ভালো খবর৷ প্রতি বছর তো এইটুকুও সহজে হয় না৷ স্বস্তি পাওয়া যেত, সোয়ান গার্মেন্টসের সমস্যার একটা সমাধান হলে৷ কিন্তু এ ব্যাপারে বিজেএমইএ ‘শ্রম মন্ত্রনালয় দায়িত্ব নিয়েছে' জানিয়েই খালাস৷ শ্রম মন্ত্রণালয় সমাধানের উপায় বের করতে কমিটি গঠন করেছে৷ মন্ত্রণালয় ওই কমিটি গঠনের বাইরে খুব তাড়াতাড়ি শ্রমিকদের কষ্ট লাঘব করার জন্য আর কিছু করেছেন বলে জানা যায়নি৷
ফলে এতগুলো মানুষের ঈদ কেটেছে রাস্তায়৷ এখনো তাঁদের দিন কাটে রাজপথে আর রাত প্রেস ক্লাবের অদূরের মুক্তিভবনে৷
আন্দোলনরত কর্মীদের ঈদে বাড়ি যাওয়া হয়নি৷ লাগাতার আন্দোলনের ধকল সইতে না পেরে অসুস্থ হয়ে কেউ কেউ গিয়েছেন হাসপাতালে৷ কারো কারো জন্য ঘরে ফেরার পথও প্রায় বন্ধ৷ মনি বেগমকে তাঁর স্বামী ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ট্যাকা পাস না, ঘরে উঠিস না, তোরে তালাক দিমু৷''
এ সব খবর পত্রিকা খুললেই পড়া যাচ্ছে, টেলিভিশনে দেখা যাচ্ছে৷ অনলাইনে বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিক্রিয়াও উঠে এসেছে গত কয়েকদিনে৷
সোয়ান গার্মেন্টসের মালিক মারা গেছেন৷ সে কারণে তো নেহায়েত মগের মুল্লুক না হলে কারখানা হুট করে চারমাস কেউ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারে না৷ ‘মালিকবিহীন' সোয়ান গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ তা-ই করছে৷ অথচ সব জরুরি অবস্থায় সমাধানেরও জরুরি উপায় থাকে, উপায় বের করতে হয়৷ গত এপ্রিল থেকে কারো তরফেই এমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি৷ শ্রম মন্ত্রণালয় দেখিয়ে বিজেএমই-র দায়িত্ব শেষ৷ শ্রম মন্ত্রণালয় একটা কমিটি গঠনের বাইরে কিছু করে থাকলেও তা দৃশ্যমান নয়, বোধগম্য নয়৷
এদিকে আমরা দেখছি, সোয়ান গার্মেন্টসের কর্মীদের কথা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে এসেছে৷ ‘ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন' জার্মানির সর্বস্তরের পোশাক ক্রেতাকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সোয়ান গার্মেন্টসের কর্মীদের দুর্ভোগের কথা জানিয়েছে৷ সোয়ানের অন্যতম ক্রেতা, জার্মানির চেইন স্টোর আল্ডির সামনে সমাবেশ করে মনি বেগম, মিনতিদের ন্যয্য দাবির প্রতি সমর্থন জানানো হচ্ছে৷ ওয়ার্ল্ড ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারও তাঁদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে৷
কিন্তু শ্রমমন্ত্রী বা সরকারের অন্য কোনো দায়িত্বশীল একবারের জন্যও যাননি প্রেস ক্লাব বা মুক্তি ভবনে৷ তাঁরা কি স্লোগান, মিছিল, কান্না কিছুই শুনতে পান না? কান পাতলেই তো শোনা যায়, চোখ মেললেই দেখা যায়!