কঠোর হওয়ার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
১১ জানুয়ারি ২০১৪বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা৷ ৫ই জানুয়ারির বিরোধী দল বিহীন একতরফা নির্বাচনে তাঁর দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর এই প্রথম তিনি প্রকাশ্য জনসভায় বক্তৃতা দেন৷
শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতায় নির্বাচন, সহিংসতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, বিরোধী দলের আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াতে ইসলামী প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কথা বলেন৷
শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ‘অশান্তি বেগম' আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘আপনি নির্বাচনে আসেননি৷ ভুল করেছেন৷ সেই ভুলের খেসারত আপনাকেই দিতে হবে৷ কিন্তু সেই ভুলের খেসারত দিতে গিয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করবেন না৷'' তিনি বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে দেশের মানুষের মনে শান্তি থাকলেও খালেদা জিয়ার মনে কোনো শান্তি ছিল না৷ তাই তিনি অশান্তির আগুন সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন৷ আন্দোলনের নামে খুন-খারপি শুরু করেছেন৷
শেখ হাসিনা দেশে সহিংসতা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘অনেক হয়েছে এবার ক্ষান্ত দিন৷ দেশের উন্নয়ন অবশ্যই হবে৷ সঙ্গে রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে বিএনপি সেটা বন্ধ করতে পারবে না৷'' তিনি বলেন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যত কঠোর হওয়া দরকার সরকার ততটাই কঠোর হবে৷
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘‘জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে খালেদা জিয়াও নির্বাচনে আসেনি৷ এতে দেশের মানুষ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে৷ মানুষ অভিশাপমুক্ত হয়েছে৷ কারণ যুদ্ধাপরাধীরা নির্বাচনে জয়ী হয়নি৷ এ কারণে বিএনপি নেত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাই৷''শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধের বিচার অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে আলাপ-আলেচানার মাধ্যমে কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধানের আহ্বান জানান৷ আগামী রবিবার নতুন মন্ত্রিসভা দায়িত্ব নেবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী৷
এদিকে শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ না করলে আওয়ামী লীগকে অতীতের স্বৈরাচারদের মতোই ভাগ্যবরণ করতে হবে৷''
তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আকড়ে রেখে ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার এবং অপকৌশলের দ্বারা কোনোভাবেই চলমান গণ-আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না৷ তিনি দাবি করেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিরোধী দল নিধনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে৷ এ কারণেই ‘সরকারদলীয় গুন্ডারা' সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করছে৷ তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটপাট চালাচ্ছে৷''
মির্জা ফখরুল সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে তাঁদের সহযোগিতায় ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান৷ এছাড়া, তিনি বিবৃতিতে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত সব আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যেতে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহ্বান জানান৷
উল্লেখ্য, বিএনপির লাগাতার অবরোধ শুক্র ও শনিবার দু'দিনের বিরতির পর রবিবার থেকে আবারো শুরু হবে৷