এখন কুশিক্ষা সর্বত্র: প্রিন্সিপাল হামিদা আলী
১৫ এপ্রিল ২০২২তিনি ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন এই সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থা, বিজ্ঞান শিক্ষা, ধর্ম, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে৷
ডয়চে ভেলে: ছাত্র- শিক্ষকের সম্পর্কের মূল ভিত্তি কী? সেটা কি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে?
হামিদা আলী: একদম নড়বড়ে হয়ে গেছে৷ বলতে খারাপ লাগে আমি একজন প্রিন্সিপাল৷ একজন শিক্ষক৷ ছাত্রদের শেখাই, পড়াই৷ কিন্তু সেই দিনগুলো পাল্টে গেছে৷ মানুষ আর মানুষকে ভালোবাসে না৷ মানুষ কথা বলতে চায় না৷ মনের সুখ-দুঃখ মনের ভিতরেই রাখে৷ এটা একটা মস্ত বড় সমস্যা৷
এর কারণ কী?
সামাজিক বিশৃঙ্খলা৷ আমরা একজন খাচ্ছি৷ আরেকজন খেতে পারছেন না৷ একজন পরছেন, আরেকজন পরতে পারছেন না৷ একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে আছি আমরা৷
শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিখবেন, না পরিবারেরও ভূমিকা আছে?
পরিবারের ভূমিকা অনেক৷ কারণ শিক্ষকদের কাছে তারা কতক্ষণ থাকে? আমরা শিক্ষকেরা শিক্ষা দিই৷ কিন্তু মা-বাবা যদি সেটা তাদের পালন করাতে চেষ্টা না করে তাহলে তো আমাদের শিক্ষা বিফলে যায়৷
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তো বহুমুখী? বাংলা, ইংলিশ, মাদ্রাসা৷ এটা কোনো সংকট তৈরি করে?
না, এটা (বাংলা, ইংরেজি) সংকট করছে না, তবে অনেক মাদ্রাসা সংকট তৈরি করছে৷ আমি মনে করি সেসব মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া উচিত৷ আমাদের ওই এলাকায় তিনটি মাদ্রাসা৷ তার মধ্যে মহিলা মাদ্রাসা একটা৷ সেখানে ছোট্ট একটা বাচ্চাকে যন্ত্রণা দিয়ে আধমরা করা হয়েছে৷ আল্লাহ যেন তার বিচার করে৷ এগুলোর কোনো বিচার হচ্ছে না৷ চারদিকে অনাচার৷ এই জন্য আমার মনে হয় দেখে শুনে মাদ্রাসা করা৷ যেখানে সত্যিকার যেখানে কোরান শিখবে, সব কিছু শিখবে, জীবনের নানা অর্থ খুঁজে বেড়াবে৷ আল্লহকে আমরা খুজব, রসুলকে(সা.) আমরা খুঁজব, কবরের চিন্তা করব- এসব কিচ্ছু নাই এখন৷ সেজন্যই আমি মনে করি আল্লাহ আমাদের সবক দিন৷ আল্লাহ তাদেরও সবক দিন৷ তারা যেন এইগুলো থেকে বিরত থাকে৷
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কুশিক্ষার কোনো উপাদান আছে?
কুশিক্ষা সর্বত্র৷ এখন কুশিক্ষা আগে আসে৷ আমরা সুশিক্ষা পরে বলি৷ কুশিক্ষা যদি একবার দিয়ে ফেলা হয় তখন সে আর সুশিক্ষা গ্রহণ করে না৷
বিজ্ঞান ও ধর্ম শিক্ষার মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব আছে?
না, নেই৷ বিজ্ঞানই তো ধর্ম৷ বিজ্ঞান আমাদের শিক্ষা দেয়৷ আবার জন্মেছি আল্লাহর হাতে, মরে যাব আল্লাহর কাছে ফিরে যাব৷ কী নিয়ে ফিরে যাব সে চিন্তাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে৷
তাহলে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল যে পরিস্থিতির শিকার হলেন তার দায় কার?
সমাজের সবার৷ তারা সাহস পেল কীভাবে? সমাজে তারা দেখেছে, শুনেছে৷ দেখেছে অন্যরা করে, তাই ভেবেছে আমরাও করব না কেন? এটা ঠিক না করা গেলে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার৷
একজন বিজ্ঞান শিক্ষক কি বিজ্ঞান পড়াতে পারবেন না?
নিশ্চয়ই, অবশ্যই পারবে৷ সকল শিক্ষার মূল বিজ্ঞান৷ আমরা জ্ঞান আহরণ করি এই বিজ্ঞান থেকে৷ সুতরাং জ্ঞান আহরণের জন্য আমাদের বিজ্ঞান পড়তেই হবে৷
শিক্ষার্থীদের যে ভূমিকা৷ তারা কি এটা নিজেরা করেছে, না তাদের ব্যবহার করা হয়েছে?
তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে৷ তাদের ব্যবহার করে এই দিকে অনুগামী করা হচ্ছে৷ সমাজটা নষ্ট করা হচ্ছে৷ বাচ্চাদের মন বিষিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ তাদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে৷ এসব কাজ যতদিন বন্ধ না হবে ততদিন আমাদের দেশের কোনো উন্নতি হবে না৷
আপনি নিজেও তো একজন শিক্ষার্থী ছিলেন৷ সেই সময়ে শিক্ষার পরিবেশ কেমন ছিল?
অনেক ভালো ছিল৷ আমরা বেতের বাড়ি খেয়ে শিক্ষা নিয়েছি৷ তারপরও পরিবেশ ভালো ছিল৷ ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক অনেক ভালো ছিল৷
এখন কি অবনতি ঘটেছে?
অনেক অবনতি ঘটেছে৷ কেউ কারুর ভালো চায় না৷ কেউ কাউকে দেখতে পারে না৷ ভালো পরিবেশ তৈরি করে না৷ সবাই নিজের চিন্তা করে৷ আমি খাই আমি খাই একটা ভাব৷
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে এমন কি কিছু আছে যা প্রকৃত শিক্ষা বাদ দিয়ে কুসংস্কার ছড়ায়?
যার শিক্ষা আছে সে কখনো কুসংস্কারের দিকে যাবে না৷ শিক্ষা আলো ছড়ায়৷ কিন্তু আমাদের শিক্ষা নানা ধারার৷ একমুখী নয়৷ একমুখী চিন্তা করতে পারছে না৷ ফলে নানা কুসংস্কার আছে শিক্ষার নামে৷
শিক্ষার মূল ভিত্তি কী হবে?
বলিষ্ঠতা৷ যে-কোনো শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো বলিষ্ঠতা৷ আমি যেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলতে পারি আমি শিক্ষাবিদ৷ আমি যেন বলতে পারি শিক্ষা জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়৷ অর্থাৎ শিক্ষাই হলো জীবনের মূলমন্ত্র৷ ভাল থাকার মূলমন্ত্র৷
ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের মূল ভিত্তি কী?
ভালোবাসা, স্নেহ, আদর৷ তাদের চরিত্রটা গঠন করে দিতে হবে৷ কাউকে আমরা কষ্ট দেবো না৷ সৎ জীবন যাপন করব৷ সুখে-দুঃখে আমরা এক সাথে থাকব৷