এক্সট্রিম স্পোর্টস
৩ মার্চ ২০১২ইডিটারড'কেই ধরা যাক৷ যা'কে বলা হয় ‘দ্য লাস্ট গ্রেট রেস অন আর্থ', বিশ্বের শেষ মহান দৌড়৷ এই স্লেজ দৌড়ের কাহিনির সূচনা ১৯২৫ সাল৷ তখন অ্যালাস্কার নোমে শহরে ডিপথিরিয়া দেখা দিয়েছিল৷ তাই অ্যাঙ্করেজ থেকে ২০ জন ‘মাশার' - মানে স্লেজগাড়ির চালক - সব মিলিয়ে মোট ১৫০টি স্লেজ টানার কুকুর নিয়ে নোমে অভিমুখে যাত্রা করেন৷
সেই ঐতিহাসিক যাত্রার স্মরণে ১৯৭৩ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই ইডিটারড ট্রেইল স্লেড ডগ রেস৷ সারা বিশ্ব থেকে মাশার'রা আসেন তাদের ১২টি থেকে ১৬টি কুকুরের দল নিয়ে৷ কুকুর বলতে প্রধানত অ্যালাস্কান হাস্কি জাতীয় বড়, লোমশ কুকুর, যাদের শীত ও তুষার সহ্য করার ক্ষমতা আছে৷ কেননা অ্যাঙ্করেজ থেকে নোমে হল ১,১৫০ মাইল পথ, যার অধিকাংশ তুষারাবৃত তুন্দ্রা৷ আবার পাহাড়ে চড়াই-উতরাই, ঘন বন, এ'সবই আছে৷ আছে তুষারের ঝড় এবং হাড় কাঁপানো বাতাস৷
এ'বছর আবার অ্যালাস্কার পশ্চিম উপকূল জুড়ে স্তূপাকার বরফ৷ কাজেই পেল্লাই আকারের, বিরাট শিংওলা হরিণ, মার্কিন মুলুকে যাদের বলে ‘মুজ' এবং ইউরোপে ‘এল্ক', তাদের সঙ্গেও মোলাকাত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে৷ ওদিকে মুজ'রা আবার কুকুর দেখলে বিশেষ ভালো মেজাজে থাকে না৷ মাশার'রা নাকি ইতিমধ্যেই ট্রেনিং দৌড়ে গিয়ে বদমেজাজি মুজ'দের দেখা পেয়েছেন৷
তবুও এ'বছরের দৌড়ে অংশগ্রহণকারী ৬৬টি দলের মধ্যে কেউই পিছ'পা হবে না৷ বিশেষ করে গতবছরের বিজয়ী জন বেকার, যিনি জাতে ইনুপিয়াট এস্কিমো, অর্থাৎ তুষার রাজ্যের আদি বাসিন্দাদের একজন৷ তিনিই প্রথম ইনুপিয়াট, যিনি ইডিটারড জিতেছেন৷ বলতে কি, তার আগে অ্যালাস্কার আর মাত্র একজন বাসিন্দা এই তুষার দৌড়ে জিতেছিলেন৷
স্পোর্ট বলে কা'কে?
অবশ্য ‘এক্সট্রিম স্পোর্টস' বা ‘চরম খেলাধুলা'র আরো অনেক নমুনা আছে৷ ‘এন্ডিউরো' নামের এক ধরণের মোটর সাইকেল দৌড় আছে, যা ট্র্যাকে না হয়ে ঘাটে-মাঠে হয়৷ ইটালির টাসকানি উপত্যকার মনোরম পাহাড় অঞ্চলে ‘ইল চিয়োক্কো' বা ‘নরকের দ্বার' নাম দিয়ে এ'ধরণের একটি রেস হয়ে আসছে ২০০৬ সাল যাবৎ৷ রেসটি যে কতো শক্ত, তার প্রমাণ: ২০১০ সালে ১০৩ জন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র দু'জন রেসটা শেষ করতে পেরেছিলেন৷
এ'বছর রাশিয়ার কিরভ'এ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘আইস ক্লাইম্বিং ওয়ার্ল্ড কাপ', অর্থাৎ তুষারারোহণের বিশ্বকাপ৷ এই স্পোর্টটি রক ক্লাইম্বিং'এর একটি কঠিনতর সংস্করণ, কেননা প্রতিযোগীদের সম্বল বলতে দু'হাতে দু'টি আইস পিক এবং পায়ে স্পাইক লাগানো জুতো৷ বাকিটা শুধু দক্ষতা, কৌশল এবং হাত-পায়ের - হয়তো মনের জোর৷ না হলে ও'ভাবে জমাট বরফে ঢাকা খাড়াই বেয়ে ওঠা-নামা করা যায় না৷
পাহাড় থেকে যদি পানিতে নামা যায়, তাহলে দেখা যাবে ‘এক্সট্রিম স্পোর্টস' বা ‘চরম খেলাধুলা' সেখানেও হাজির৷ যেমন ব্রাজিলের রিও ডি জানিরো'তে বিলাবং রিও প্রো, অথবা অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে কিংবা হাওয়াই'এর বানজাই পাইপলাইনে সার্ফিং প্রতিযোগিতা৷ পায়ের তলায় শুধু এক টুকরো কাঠের ওপর নির্ভর করে যে কিভাবে একটা দৈত্যাকার ঢেউ'এর সামনে নেচে বেড়ানো যায়, তা জানেন এই সার্ফাররা৷
নদী থেকে আকাশে৷ হাঙ্গেরি'র সিওফোল্ক'এ হয় একটি ‘আর্টিস্টিক উইংসুট কম্পিটিশন'৷ এ'টি হল স্কাই-ডাইভিং'এর কঠিনতর সংস্করণ৷ অর্থাৎ শুধু প্লেন থেকে ঝাঁপ খেয়ে বেশ খানিকক্ষণ পড়ার পর প্যারাসুট খোলাই নয়৷ এই উইংসুট'গুলোয় হাতের ও পায়ের মধ্যে বাদুড় কি কোনো কোনো ধরণের কাঠবিড়ালির মতো একটা পাখার অংশ থাকে৷ তার কল্যাণে সত্যিই বেশ কিছুদূর - মানে বেশ কয়েক মাইল - উড়ে যাওয়া যায়৷ এবং শুধু উড়লেই হবে না, উড়তে উড়তে আবার নানা ক্যারদানি-কসরত দেখাতে হবে!
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম