একনায়কদের সাহিত্যকর্ম
বই, প্রবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক দর্শন তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন একনায়ক৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা৷
আডল্ফ হিটলার
১৯২০-এর দশকে দুই খণ্ডে ‘মাইন কাম্ফ’ বা ‘আমার সংগ্রাম’ লিখেছিলেন আডল্ফ হিটলার৷ এটি ছিল একটি নাৎসি ম্যানিফেস্টো৷ এছাড়া এতে তার ইহুদিবিদ্বেষ উঠে এসেছিল৷ ১৯৩৩ সালে হিটলার চ্যান্সেলর হওয়ার পর বইয়ের বিক্রি বেড়ে যায়৷ ১৯৪৫ সালে তার মৃত্যুর আগে বইটি ১৮ ভাষায় অনূদিত হয়েছিল৷ বিক্রি হয়েছিল প্রায় এক কোটি ২০ লাখ কপি৷
৭০ বছর নিষিদ্ধের পর নতুন সংস্করণ
১৯৪৫ সালের পর জার্মানিতে মাইন কাম্ফের প্রকাশনা নিষিদ্ধ ছিল৷ কিন্তু মেধাস্বত্ত্ব আইন অনুযায়ী লেখকের মৃত্যুর ৭০ বছর পর তার বইয়ের মেধাস্বত্ত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়৷ ২০১৫ সালে সেই মেয়াদ শেষ হয়৷ এরপর হিটলারের বইয়ের মূল টেক্সটের সঙ্গে নানান তথ্য, ব্যাখ্যা ও মন্তব্য যোগ করে ‘হিটলার, মাইন কাম্ফ: এ ক্রিটিক্যাল এডিশন’ নামে বই প্রকাশ করা হয়৷
বেনিতো মুসোলিনি
ইটালীয় দার্শনিক জিওভান্নি জেন্তিলের সঙ্গে মিলে ‘ডকট্রিন অফ ফ্যাসিজম’ প্রবন্ধ লিখেছিলেন ইটালীয় স্বৈরশাসক মুসোলিনি৷ ১৯৩২ সালে এটি প্রকাশিত হয়েছিল৷ ১৯২২ সালে সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতা নেয়ার পর ১৯২৫ সালে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মুসোলিনি৷ প্রবন্ধে নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও ফ্যাসিবাদ নিয়ে তার দর্শন তুলে ধরেছিলেন তিনি৷
জোসেফ স্ট্যালিন
১৯২৪ সালে লেনিনের মৃত্যুর পর ক্ষমতা নেন স্ট্যালিন৷ ১৯৩৮ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির শুরুর দিক নিয়ে নিজের ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রোপাগাণ্ডা বুকলেট প্রকাশ করেছিলেন৷ সেই সময়ের এক বলশেভিক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘বাইবেলের পরিবর্তে’ স্ট্যালিনের বুকলেট ব্যবহৃত হবে৷ রাশিয়াতেই এর প্রায় চার কোটি ২০ লাখ কপি প্রকাশিত হয়েছিল৷ এছাড়া লেনিনবাদের সমালোচনা, সোশ্যালিস্ট ইকোনমিকস ও ভাষাতত্ত্বের উপরও বই লিখেছিলেন তিনি৷
মাও সেতুং
৩৩টি বিষয়ে মাও সেতুং-এর ৪২৭টি মন্তব্য নিয়ে ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘কোটেশনস ফ্রম চেয়ারম্যান মাও সেতুং’৷ পকেটে রাখা যায় এমন আকার ও লাল কাভারের হওয়ায় বইটি ‘দ্য লিটল রেড বুক’ নামেও পরিচিত৷ এটি বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত একটি বই৷
মুয়াম্মার গাদ্দাফি
২০১১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪০ বছরেরও বেশি সময় লিবিয়া শাসন করেছেন গাদ্দাফি৷ মাও সেতুংয়ের মতো তিনিও তার রাজনৈতিক দর্শন তুলে ধরে ১৯৭৫ সালে ‘দ্য গ্রিন বুক’ প্রকাশ করেছিলেন৷ সব লিবীয়র জন্য এটি ‘পড়া বাধ্যতামূলক’ ছিল৷ স্কুলের পাঠ্যসূচিতে এই বই ছিল৷ এছাড়া বিলবোর্ড ও রেডিও-টিভিতে বইয়ের বিভিন্ন অংশ প্রচার করা হত৷
সাদ্দাম হুসেইন
সাদ্দামের মেয়ের দাবি, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক দখল শুরুর আগের দিন ‘বিগন, ডেমোনস’ (যার অর্থ, অভিশপ্তরা চলে যাও) লেখা শেষ করেছিলেন৷ ২৫৬ পৃষ্ঠার বইতে তিনি মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সংগ্রাম তুলে ধরেন৷ ২০০৮ সালে জাপানের এক প্রকাশক বইটি বের করে৷ এটি তার চতুর্থ উপন্যাস ছিল৷ একটি বইতে তিনি তার বাথ পার্টি গঠনের কথা তুলে ধরেন৷ তিনি বেশ কিছু কবিতাও লিখেছেন৷
কিম ইল-সুং
১৯৪৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার নেতা ছিলেন কিম ইল-সুং৷ তার প্রায় ১১ হাজার সাহিত্যকর্ম প্রকাশিত হয়েছে৷ কবিতা, নাটকসহ কমপক্ষে আটটি আত্মজীবনী লিখেছেন তিনি৷ উত্তর কোরিয়া পরিচালিত হয় ‘চুচে’ দর্শন দ্বারা, যেটি মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের আরেক সংস্করণ বলে শুরুতে মনে করা হত৷ পরে এতে অনেক পরিবর্তন আনেন কিম ইল-সুং৷ তার ছেলে কিম জং-ইলও চুচে, সমাজতন্ত্রসহ নান বিষয় নিয়ে প্রায় ৯০০ সাহিত্যকর্ম প্রকাশ করেছেন৷