ইস্তানবুলের গ্র্যান্ড বাজারের জন্য নতুন সাজ
জেমস বন্ডের ছবি ‘স্কাইফল’-এর গোড়ায় সেই মোটরসাইকেলে চড়ে ধাওয়া করার দৃশ্য মনে আছে? দৃশ্যটির শুটিং হয়েছিল ইস্তানবুলের বিখ্যাত গ্র্যান্ড বাজারের ছাদে৷ সেই ছাদের অবশ্য এখন খারাপ অবস্থা৷ তাই শুরু হয়ে গেছে মেরামতির কাজ৷
পর্যটকদের চোখে বিশ্বের সেরা গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি
গ্র্যান্ড বাজার মানে বড়বাজার, তুর্কি ভাষায় বলে ‘কাপালিচার্সি’৷ ২০১৪ সালেও এই বাজার পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় একটি গন্তব্যস্থান ছিল৷ বাজারের খোলার ছাদগুলো মেরামতের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ১৪ই জুলাই৷ এর ঠিক পরদিনই একটি সামরিক অভ্যুত্থানে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়৷ কিন্তু তাতে গ্র্যান্ড বাজার মেরামতির কাজ থামেনি৷ ছবিতে কর্মীরা বেড়ালের মতো ছাদের ওপর দিয়ে হুইলব্যারো ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন৷
‘স্কাইফল’-এর ধাক্কা শুধু নয়...
জিরো-জিরো-সেভেনের মোটরসাইকেলে চড়ে ধাওয়া করার দৃশ্যের শুটিং করতে গিয়ে গ্র্যান্ড বাজারের কিছু কিছু অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ তবে ‘হলিউড থেকে আসা বন্ধুরা’ যে ক্ষতি করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে কালের যাত্রায় – বলেছেন ওকান এর্হান ওফ্লাজ, যিনি ফতিহ এলাকার ডেপুটি মেয়র৷ গ্র্যান্ড বাজার ঐ এলাকাতেই অবস্থিত৷
গ্র্যান্ড বাজার সন্ত্রাসী আক্রমণের লক্ষ্য হতে পারে
ছবিতে তুর্কি পুলিশ বাজারের চারপাশে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে৷ সম্প্রতি ইস্তানবুলে একাধিক সন্ত্রাসী আক্রমণ হয়েছে, যার জন্য কুর্দ জঙ্গি ও জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সদস্যরা দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কাজেই বাজারের দোকানিদের চিন্তা আপাতত মেরামতির কাজ কেমন চলেছে, তা নিয়ে নয়, বরং টুরিস্টদের সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে৷
ঐতিহাসিক
গ্র্যান্ড বাজারের প্রায় তিন হাজার দোকানে কাজ করেন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ অটোমান সাম্রাজ্যের সময় গ্র্যান্ড বাজার ছিল আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র৷ ছয় শতাব্দী ধরে অটোমান সাম্রাজ্য মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় রাজত্ব করে – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে তার অন্ত ঘটা অবধি৷
‘ঢাকা বাজার’
তুর্কি ভাষায় গ্র্যান্ড বাজারের নাম হলো ‘কাপালিচার্সি’, যার অর্থ ‘ঢাকা বাজার’, অর্থাৎ খোলা আকাশের নীচে নয়, বরং ছাদ দেওয়া বাজার৷ বাজারটি ইস্তানবুলের ঐতিহাসিক উপদ্বীপে অবস্থিত৷ সুলতান আহমেদের মসজিদ ও প্রখ্যাত হাজিয়া সোফিয়ার অবস্থানও ঠিক সেখানেই৷
স্থানীয় লোকেরাও আসেন
গ্র্যান্ড বাজারে আবারো আগের মতো টুরিস্টরা গম গম করবে, সেই দিনের আশায় আছেন দোকানিরা৷ ওফ্লাজ স্বীকার করেন যে, পর্যটকদের সংখ্যা কমেছে৷ তবে তাঁর দাবি, বাজারের ৩০ হাজার দোকানি ও কর্মীরা ‘নিজেরাই একটা বাহিনী’৷ এছাড়া শুধু টুরিস্টরা তো নয়, ইস্তানবুলের বাসিন্দারাও গ্র্যান্ড বাজারে আসতে ভালোবাসেন৷
প্রতিবেদন: নাদিন ব্যার্গহাউসেন/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ