ইরানকে এই আক্রমণের দাম দিতে হবে, নেতানিয়াহু
২ অক্টোবর ২০২৪গাজার পর এবার লেবাননে লাগাতার আক্রমণে নেমেছে ইসরায়েল। দক্ষিণ লেবাননে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলের সেনা। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ইসরায়েল লক্ষ্য করে প্রায় ২০০টি মিসাইল নিক্ষেপ করেছে ইরান। রাজধানী তেল আভিভ-সহ সর্বত্র এই আক্রমণ চালানো হয়েছে। যার জেরে দ্রুত দেশের মানুষকে নিরাপদ বাঙ্কারে পাঠাতে বাধ্য হয় ইসরায়েলের প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইসরায়েলের আকাশ সীমা।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি দেশের সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, জাতিসংঘের সনদের ৫১ নম্বর ধারায় আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সেই ধারা মেনেই ইসরায়েলে আক্রমণ চালানো হয়েছে। কারণ ইসরায়েল গাজা এবং লেবাননে 'গণহত্যা' চালাচ্ছে। নিজের এক্স হ্যান্ডেলেও এই পোস্ট করেছেন তিনি। আব্বাস আরাঘচি সেখানে আরো লিখেছেন যে, এর আগে ইরানের ভিতরেও হত্যালীলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সে কারণেই আত্মরক্ষার তাগিদে ইরান এই পদক্ষেপ নিয়েছে। বস্তুত, লেবাননে হিজবুল্লা গোষ্ঠী ইরানের মদতপুষ্ট, এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ইরানও একথা অস্বীকার করে না।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইরানের এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছেন। প্রথমত, ইরান যাকে 'গণহত্যা' বলে ব্যাখ্যা করেছে, ইসরায়েল তা গণহত্যা বলে মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, বেছে বেছে গাজা বা লেবাননে বেসামরিক মানুষের উপর তারা আক্রমণ শানায়নি। কেবলমাত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির উপর আক্রমণ চালানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ইরানের আক্রমণের প্রেক্ষিতে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানকে যথা সময়ে এর উত্তর দেওয়া হবে। ইরানের মনে রাখা উচিত, ইসরায়েলকে একবার কেউ আক্রমণ করলে ইসরায়েল তাকে ছেড়ে দেয় না। যথাসময়ে ইরানকে এই আক্রমণের দাম চোকাতে হবে।
বাইডেন ও হ্যারিসের বক্তব্য
এদিন ইসরায়েলে ইরান আক্রমণ চালানোর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, অ্যামেরিকা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করছে। কীভাবে এই আক্রমণের জবাব দেওয়া যায়, তা নিয়ে কথা হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্য়াট প্রার্থী। তিনি বলেছেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে ইরান একটি ভয়ংকর এবং অস্থির শক্তি। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ সহমত।' বস্তুত, বাইডেন বলেছেন, ইসরায়েল লক্ষ্য করে ইরান ফের মিসাইল ছুঁড়লে অ্যামেরিকা তা ধ্বংস করতে সাহায্য করবে ইসরায়েলকে।
দক্ষিণ বৈরুতে ইসরায়েলের অভিযান
এদিকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলের অভিযান অব্যাহত। মঙ্গলবার ইসরায়েলের সেনা ফের দক্ষিণ বৈরুতের বেসামরিক মানুষকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ওই অঞ্চলে হিজবুল্লার পরিকাঠামো আছে। ফলে সেনা সেখানে অভিযান চালাবে। লাগাতার সেখানে বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে অন্তত ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১৫৬।
জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন
জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুই মঞ্চই উত্তেজনা প্রশমনের কথা বলেছে। জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক আক্রমণ হয়ে চলেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা করি। এই আক্রমণ প্রতি আক্রমণ এই মুহূর্তে বন্ধ হওয়া উচিত। দ্রুত সংঘর্ষ বিরতি প্রয়োজন।'
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান জসেপ বরেল এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, 'ইসরায়েলে ইরানের আক্রমণের তীব্র নিন্দা করছি।' তিনি বলেছেন, যেভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটছে তাতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবপক্ষের কাছে শান্ত হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)