ইম্ফল আবার অশান্ত, কেন বারবার এই সহিংসতা?
২ নভেম্বর ২০২৩প্রথমে মোরেতে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে মণিপুর পুলিশের এক অফিসারকে হত্যা করা হয়। তারপর মণিপুর পুলিশের দলকে যখন মোরেতে পাঠানো হচ্ছিল, তখন তাদের উপর আক্রমণ চালানো হয়। এরপর ইম্ফল শহরে মণিপুর রাইফেলসের শিবির ঘিরে ধরে মেইতেইদের একটি যুব সংগঠনের প্রায় তিন হাজার সদস্য। অভিযোগ, তাদের অনেকেই সশস্ত্র ছিলেন।
স্থানীয় মানুষদের উদ্ধৃত করে দ্য ওয়্যার জানাচ্ছে, ওই যুবকরা মণিপুর রাইফেলসের শিবিরে ঢোকার চেষ্টা করে। গুলিগোলা চলে। স্থানীয়রা গুলি চালানোর আওয়াজ পেয়েছেন। কিন্তু তাতে কেউ হতাহত হয়েছে কিনা জানা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের সামনেও জনতা জড়ো হয়েছিল। মণিপুর পুলিশ শূন্যে গুলি চালায়।
এরপরই ইম্ফলে আবার কার্ফিউ জারি করা হয়। কুকি এলাকায় শুরু হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার বনধ। কুকি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন এই বনধের ডাক দিয়েছে।
ইম্ফলের পরিস্থিতি
ইম্ফলে এখন প্রবল উত্তেজনা আছে। ইম্ফল থেকে আর্মস্ট্রং ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''শহরের রাস্তা প্রায় ফাঁকা। খুব কম দোকানপাট খুলেছে। এমনকী যেখানে শহর শেষ হচ্ছে, সেখানেও খুব দোকানপাট খোলা। রাস্তায় অল্প কিছু গাড়ি বা দ্বিচক্রযান চলছে।''
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''শহরে উত্তেজনা রয়েছে। তবে আগে যেমন ইম্ফল থেকে মানুষ পাহাড়ের কাছের এলাকায় চলে যেতেন, সেটা এখন আর হচ্ছে না। কারণ, পুলিশ জানিয়েছে, তারা সক্রিয় থাকবে। কোনোরকম সহিংসতা হতে দেবে না। এরপর মানুষ ইম্ফলেই থাকছে।''
মোরের ঘটনা ও তার প্রভাব
মোরে হলো ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের শহর। এই এলাকায় কুকিদের সংখ্যাধিক্য। মণিপুরে সমতলে মেইতেইরা থাকেন। আর কুকি-সহ অন্য জনজাতিরা মূলত থাকেন পাহাড়ে। গত মে মাসে কুকি ও মেইতেইদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। তারপর মেইতেই এলাকায় কুকিদের ও কুকি এলাকায় মেইতেইদের বাড়ি, দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়। মেইতেই ও কুকি এলাকায় প্রচুর ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। সেখানে দুই সম্প্রদায়ের গৃহহীন মানুষরা আশ্রয় নিয়েছেন। মোরেতেও মেইতেইদের বাড়ি ও দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
মোরেতে একটা হেলিপ্যাড বানানো হচ্ছিল। মোরেতে দুইটি হেলিপ্যাড আছে। তবে সেই দুইটি আসাম রাইফেলসের। নতুন হেলিপ্যাড করা হচ্ছিল মণিপুর পুলিশের জন্য। সেখানেই ডিউটিতে ছিলেন মণিপুর পুলিশের অফিসার চিংথাম আনন্দ। স্নাইপার রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করে অনেক দূর থেকে লক্ষ্যে আঘাত করা সম্ভব। মণিপুর পুলিশের অভিযোগ, কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই পুলিশ অফিসারকে হত্যা করেছে।
এরপর মণিপুর পুলিশের একটা দলকে সেখানে পাঠানো হয়। তেঙ্গউপল বলে একটা জায়গায় তারাও আক্রান্ত হয়। বেশ কয়েকজন আহত হন।
এই তেঙ্গউপলেই কুকিদের যুব সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নারীরা দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন।
সমাধান কোন পথে?
মোরের অধিকাররক্ষা কর্মী ও আইনজীবী ডেভিড ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''পুলিশ অফিসারকে মারার ঘটনার ক্ষেত্রে আসল সত্য আমার জানা নেই। কারা করেছে তাও জানি না। তবে আমরা বারবার শান্তির দাবি করছি। তা নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি। তারপর আরো বেশি করে পুলিশ ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে।''
ডেভিডের দাবি, ''কেন্দ্রীয় বাহিনীই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। সরকার ইচ্ছে করে রাজ্য পুলিশ ঢুকিয়ে অশান্তি তৈরি করতে চাইছে।''
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্রও মনে করেন, ''সরকার এই বিষয়টাকে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হিসাবে দেখতে চাইছে। কিন্তু এটা রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা। পুলিশ ও আধা সেনার হাতে বিষয়টি ছেড়ে দিয়ে এর সমাধান হবে না।''
শুভাশিস ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''সরকারের উচিত ছিল সব দলের সঙ্গে, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা। সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা। এটাও মনে রাখতে হবে সব পক্ষের হাতে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র আছে।''
দিল্লিতে অসমীয়া প্রতিদিনের ব্যুরো চিফ আশিস গুপ্তও মনে করেন, ''পুলিশ ও সেনার হাতে সব ছেড়ে দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। এতে কিছুদিন সামান্য শান্ত থাকবে মণিপুর। তারপর আবার অশান্ত হবে। সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। তাদের আলোচনার পথ নিতেই হবে।''