ইমার্সিভ আর্টের জগতে দর্শকরাই স্রষ্টা
১১ এপ্রিল ২০২৪‘টিমল্যাব বর্ডারলেস' ঠিক সশরীরে যাওয়ার জগত নয়, বরং উপলব্ধি করার জায়গা৷ টোকিও শহরের সেই মিউজিয়ামে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়৷ শিল্পকর্মের সামনে না দাঁড়িয়ে অতিথিদের তার ভেতরে যেতে আমন্ত্রণ জানানো হয়৷
সেই ইমার্সিভ ইনস্টলেশন-কে ‘বাবল ইউনিভার্স' বলা হয়৷ দর্শক নড়াচড়া করলেই সেই জগত জীবন্ত হয়ে ওঠে৷ শারীরিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই শিল্পীর কনসেপ্ট ও দর্শনের অভিব্যক্তির স্বাদ পাওয়া যায়৷ টিম ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা তোশিউকি ইনোকো বলেন, ‘‘মানুষ মনে করে, জগতে বিচ্ছিন্ন সত্তা রয়েছে যেগুলির নিজস্ব স্বাধীন অস্তিত্বও রয়েছে৷ টিমল্যাব বর্ডারলেসের আওতায় আমরা শিল্পকর্মের মাধ্যমে এক অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করতে চাই৷ সেখানে পৃথিবী আসলে অবিচ্ছিন্ন৷ পৃথিবীর সেই ধারাবাহিকতাকে সুন্দর হিসেবে অনুভব করা যায়৷''
সেই প্রযুক্তির ফল হিসেবে দর্শকরা শুধু পর্যবেক্ষক থাকেন না৷ তারা শিল্পকর্মে অবদানও রাখেন৷ তোশিউকি ইনোকো বলেন, ‘‘আমার মতে, যেখানে অন্য মানুষের উপস্থিতি শিল্পকর্ম বদলে দেয় এবং আপনার মধ্যেও কোনো ধরনের পরিবর্তন আনে, সেখানে শিল্পকর্ম ও আপনার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ অন্যান্য মানুষ এমন অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে ধারাবাহিকতার একটা আবহ অনুভব করা যায়৷''
টোকিওয় টিমল্যাবের স্টুডিওতে শিল্পীরা নতুন ইমার্সিভ সৃষ্টিকর্ম ডিজাইন করে চলেছেন৷ বৈচিত্র্যে ভরা সেই টিম শিল্প সৃষ্টির নতুন উপায় নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে ভালোবাসে৷ টিমল্যাবের মুখপাত্র তাকাশি কুদো জানান, ‘‘টিম ল্যাব বিশেষজ্ঞদের এক গোষ্ঠী৷ আমরা হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, থ্রিডি অ্যানিমেটর, স্থপতি, গণিতবিদ, অ্যালগোরিদম বিশেষজ্ঞ, নানা ধরনের প্রোগ্রামার, উদ্ভিদবিদ ইত্যাদি৷ আমরা নানা মিডিয়া, মনিটর, প্রোজেক্টর, এলইডি, রোবটিক্স – অনেক কিছু ব্যবহার করি৷ আমরা কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করি৷''
ইমার্সিভ আর্ট জগতে টিমল্যাবই একমাত্র ‘প্লেয়ার' নয়৷ আরো বেশি শিল্পী, গ্যালারি ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ইমার্সিভ আর্ট প্রকল্প সৃষ্টি করছে৷ জাপাানি ফটোগ্রাফার মিকা নিনাগাওয়া তাঁদেরই একজন৷
প্রশ্ন হলো, ইমার্সিভ আর্ট কেন এত মানুষকে আলোড়িত করে? উত্তরে কিউরেটর ও ইতিহাসবিদ হিসেবে চোগাকাটে কাজারিয়ান বলেন, ‘‘আমার মতে, অতীতের তুলনায় আমরা শিল্পের ক্ষেত্রে অনেকটা অলস হয়ে পড়েছি৷ গভীর চিন্তা ও সংলাপের লক্ষ্যে আমাদের উদ্যম অনেক কমে গেছে৷ ঐতিহ্যবাহী শিল্পের রূপের ক্ষেত্রে আমাদের শিল্পকর্মের কাছে যেতে হয়৷ অন্যদিকে এমন ইমার্সিভ চমকের ক্ষেত্রে শিল্পকর্মই আমাদের কাছে আসছে, আমাদের নিমগ্ন করছে৷ দ্বিতীয় কারণটা সাম্প্রতিক৷ সেটা হলো সোশাল মিডিয়া৷ এই সব শিল্পকর্ম ইনস্টাগ্রামের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত৷ সেই প্রেক্ষাপটে একটা তৃতীয় কারণও রয়েছে৷ আমার মতে, সেটা হলো কোভিড৷ আমরা সে সময়ে বাস্তব জগত থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় স্বাভাবিক অনুভূতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম৷ সবকিছু ফ্ল্যাট স্ক্রিনের উপর ঘটছিল৷ তাই আমার মনে হয় বাইরে বেরিয়ে আমাদের গোটা শরীর নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের তাগিদ জন্মাচ্ছিল৷''