কঙ্গোতে ইবোলার ছোবল
২৫ মে ২০১৮ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত মৃত্যু পথযাত্রী দু'জন রোগী স্বজনদের সহযোগিতায় মোটর সাইকেলে চড়ে কঙ্গোর একটি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান৷ এরপর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি প্রার্থনাকক্ষে, যেখানে আরও ৫০ জনের মতো মানুষ ছিলেন৷ এবার ঐ ৫০ জনেরই ইবোলার মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
হাসপাতাল থেকে পালানোর সময়ই ঐ দুই রোগী বারবার বমি করছিলেন৷ বলা বাহুল্য, ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দু'জনেই ছিলেন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে৷ প্রার্থনাকক্ষে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পরই কঙ্গোর নদী বন্দর বানডাকা থেকে দু'জনের মৃতদেহ পাওয়া যায়৷ জানান ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স-এর জরুরি সেবা বিভাগের সমন্বয়ক জঁ-ক্লিমঁ কাবরোল৷
আক্রান্ত রোগীর শরীর নিঃসৃত যে কোনো তরল পদার্থ থেকে মারাত্মক ছোঁয়াচে এই ইবোলা ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ এর মধ্যে ঘাম বা বমিও আছে৷ তাই কঙ্গোর সরকারকে এ মুহূর্তে রীতিমত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো সজাগ থাকতে হচ্ছে, যাতে ইবোলা মহামারির আকার ধারম করতে না পারে৷
এরইমধ্যে কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিকোরো শহর এবং ইবোকো নামের একটি গ্রামে নতুন করে দু'জন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাঁরা ইবোলায় আক্রান্ত৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই দু'জন রোগী নিয়ে মোট ৩১ জন ইবোলা আক্রান্ত রোগীকে সন্দেহের তালিকায় থাকা ৫২ জন রোগীর মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে৷
কঙ্গোতে এই নিয়ে নবমবারের মতো ইবোলা ভাইরাস আক্রমণ করল৷ এ দফায় ইতিমধ্যে ২২ জন মারা গেছেন বলে বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে কঙ্গো সরকার৷ যদিও এর আগে তারা ইবোলায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা ২৭ বলেছিল৷
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, প্রথমে ২৭ জনের কথা বলা হলেও পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে বাকি পাঁচজন অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷
দুর্গত এলাকা ঘুরে এসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস-এর জঁ-ক্লিমঁ কাবরোল বলেন, ‘‘পরিবারের সহায়তা নিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান দু'জন ইবোলা রোগী৷ মোটরবাইকে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়, কেননা পালানোর সময় রোগীরা খুবই দুর্বল ছিলেন এবং হাঁটতে পারছিল না৷’’
তিনি বলেন, ‘‘ঐ দু'জনকে একটি প্রার্থনাকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ যেখানে আরও ৫০ জন ছিলেন প্রার্থনার জন্য৷ সকালে তাঁদের দু'জনকে খুঁজে পাওয়া যায়৷ একজন তারমধ্যেই মারা গিয়েছেন৷ আর আরেকজন মৃতপ্রায় ছিলেন, অসম্ভবব বমি করছিলেন৷ প্রার্থনাকক্ষে থাকা ঐ ৫০ জনেও এখন ইবোলায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷’’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) ইমারজেন্সি রিসপন্স বিভাগের প্রধান পিটার সালামা জানান, মোটর বাইকে করে ঐ দুই ইবোলা রোগীকে পালাতে যাঁরা সাহায্য করেছেন, তাঁদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ কেননা, ছোঁয়াচে ইবোলা হয়ত সাহায্যকারীদের মাধ্যমেই মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়বে৷ তিনি বলেন, ‘‘ঐ দুইজন পালানোর পর থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য সহযোগী সংস্থা রোগীদের সম্ভাব্য সংস্পর্শে এসেছেন এমন সব মানুষের ওপর কড়া নজরদারি করছে৷’’
এদিকে ইবোলা মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ত্রৈমাসিক তহবিল বাড়িয়ে ৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার করেছে, যা এর আগের ঘোষণার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ৷
পিটার সালামা বলেন, ‘‘ধরা যাক, কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি কঙ্গো নদী ধরে হাঁটা শুরু করলেন৷ তখন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় একইসাথে ইবোলা দেখা দেবে৷ আসলে যে কোনো সময় এটা ঘটতে পারে৷ এ কারণেই বাজেট বাড়ানো হয়েছে৷’’
এ সময় তিনি কঙ্গো নদীর তীরের জনপদ, অর্থাৎ বন্দর নগরী বানডাকা থেকে রাজধানী কিনশাসায় বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি মানুষ এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে আশঙ্কার কথা জানান৷
২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পশ্চিম আফ্রকায় ইবোলা ছড়িয়ে পড়ে৷ তারপর থেকে অবশ্য এর চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে৷ বিশেষ করে চিকিৎসা বা সেবাকর্মীরা যাতে আক্রান্ত না হন, সে জন্য একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনও চালু হয়েছে ইতিমধ্যে৷
কিন্তু স্থানীয় আফ্রিকানদের মধ্যে ইবোলা নিয়ে ভীতি বা পলায়ন মনোবৃত্তি রয়েছে৷ পাশাপাশি তাঁদের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা না রাখার ব্যাপারেও সংস্কার রয়েছে৷ ফলে এর চিকিৎসা এখনো জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি৷
অতীতে দেখা গেছে, ইবোলা আক্রান্ত রোগী মারা যাওয়ার পর, তাঁর স্বজনেরা আবেগের বশে রোগীকে জড়িয়ে ধরেছেন এবং পরে নিজেরাই ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
এইচআই/ডিজি (আরটিআরই, রয়টার্স)
২০১৪ সালের ৮ আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...