1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আসল’ বিরোধী দল হতে চায় জাতীয় পার্টি?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ জানুয়ারি ২০১৯

সরকারে থেকে বিরোধী দল নয়৷ এবার সত্যিকারের বিরোধী দল হতে চায় জাতীয় পার্টি৷ তারা দেশ ও জনগণের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে চায় বলেই এই সিদ্ধান্ত৷ কিন্তু এটা বাস্তবে কতটা সম্ভব হবে?

https://p.dw.com/p/3B4XC
ফাইল ফটোছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images

নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা প্রকাশ্যেই দশম সংসদের মতো একাদশ সংসদেও সরকারে থেকেই বিরোধী দলে থাকার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন৷ জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বও এজন্য প্রধানমন্ত্রীর ‘সিগন্যালের' অপেক্ষায় ছিলেন৷ জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের অধীনেই নির্বাচন করে৷ লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মোট ২২ জন নির্বাচিত হয়েছেন৷

জানা গেছে, শুক্রবার রাতে দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবার সত্যিকার অর্থেই সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তিনি হবেন বিরোধী দলীয় নেতা৷ জিএম কাদেরকে উপনেতা আর মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷ আর সেই অনুযায়ী শনিবার সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতিও পাঠানো হয়েছে৷ 

‘এরশাদ সাহেবের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’

প্রসঙ্গত, গত সংসদেও জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে ছিল৷ কিন্তু, তাদের দল থেকে আবার তিনজন মন্ত্রীও ছিলেন সরকারে৷ তাঁরা হলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রমপ্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা৷ আর এরশাদ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন৷

জাতীয় পার্টির মধ্যে বিভক্তি

সোমবার নতুন মন্ত্রিসভার শপথ নেয়ার কথা রয়েছে৷ শেষ পর্যন্ত যদি এরশাদ তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তাহলে মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির কোনো মুখ দেখা যাবেনা৷ গত সংসদে এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ বিরোধী দলীয় নেতা হলেও এবার তাঁর কী অবস্থান হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ তবে, জাতীয় পার্টির মধ্যে এখনো বিভক্তি স্পষ্ট৷

একাধিক সূত্র জানায়, একটি অংশ এখনো চায় সরকারে থেকেই বিরোধী দল হতে৷ তাদের যুক্তি হল ‘প্রকৃত' বিরোধী দল হলে তারা অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন৷ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের অংশ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়৷ ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সরকারে অংশ নেয়৷ মন্ত্রিত্ব নেয়৷ বিএনপি ছিল বিরোধী দলে৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তারা সরকারে অংশ নিয়েও বিরোধী দল হওয়ার এক নতুন ‘দৃষ্টান্ত' স্থাপন করে৷

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এখন মশিউর রহমান রাঙ্গা৷ নির্বাচনের আগে রুহুল আমীন হাওলাদারকে এই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়৷ কিন্তু এরশাদের অনুপস্থিতে দলের সব সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের হাতে৷ তিনি এরশাদের ছোট ভাই৷ তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মহাজোট সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন৷ এবার তাঁকে এরশাদ বিরোধী দলীয় উপনেতার পদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷

জিএম কাদের এই বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বচনে আমাদের মহাজোটের প্রতিপক্ষ ছিল ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপি'র নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট৷ তারা যে নির্বাচনে এত খারাপ করবে তাতো আমরা আগে বুঝতে পারিনি৷ এখন দেখা যাচ্ছে সংসদ একতরফা হয়ে যাচ্ছে৷ বিরোধী দল বলতে তেমন কিছু থাকছে না৷ এটা মহাজোটও চিন্তা করছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা আলাদা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছি৷ সংসদে জনগণের কথা বলা দরকার৷ তাদের অভাব অভিযোগের কথা তুলে ধরা দরকার৷ আমাদের সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতাও আছে৷ তাই আমরা বিরোধী দলে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ আমাদের দল থেকে কেউ মন্ত্রিত্ব নেবেনা৷ এটা আমাদের নেতার, দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের আশা, এবার আমরা সত্যিকারের কার্যকর বিরোধী দলে পরিণত হতে পারব৷''

গত সংসদে সরকারে ও বিরোধী দলে একই সঙ্গে থাকায় কী সমস্যা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সেখানে আমাদের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট লক্ষ্য করেছি৷ এর কারণ হলো আমাদের বেশ কিছু সদস্য সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন৷ সেখানে আমরা যে সব সময় সরকারের সমালোচনা ঠিকমত করেছি কিনা, আমরা সকারের পক্ষপাত্বি করছি কিনা- এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের সন্দেহ ছিল৷'' 

‘এখন দেখা যাচ্ছে সংসদ একতরফা হয়ে যাচ্ছে’

এবার জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন ২২ জন৷ জানা গেছে, তাদের একটি অংশ এরশাদের স্ত্রী এবং জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়াম্যান রওশন এরশাদের অনুসারী৷ দলের এই অংশটি এখনো চায় সরকারে অংশ নিয়েই বিরোধী দল হতে৷ তারা এখনো দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন৷

কার্যকর বিরোধী দল কি হতে পারবে জাতীয় পার্টি?

প্রশ্ন হচ্ছে যদি জাতীয় পার্টি সরকারে না থেকে বিরোধী দলের আসনে বসে তারপরও তারা সংসদে কার্যকর বিরোধিতা গড়ে তুলতে পারবে কিনা৷ কারণ তারা মহাজোটের অংশ এবং গত সংসদে তাদের বিরোধিতার কোনো ইচ্ছাও দেখা যায়নি৷ এর জবাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত সংসদের বিরোধী দল ছিল অদ্ভূত৷ তারা সরকারেও ছিল আবার বিরোধী দলেও ছিল৷ এটা ছিল নজিরবিহীন ও অভিনব৷ তবে এবার যে তারা সরকারে না থেকে বিরোধী দলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখন তারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবে৷ বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র হয়না৷ আগের সংসদে যা ছিল তাকে বিরোধী দল বলা যায়না৷''

তবে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি সরকারে না থেকে সত্যিই বিরোধী দলে বসছে কিনা তা নিয়ে এখনো সন্দেহ সংশয় আছে৷ কারণ মন্ত্রিসভা গঠন হতে এখনো ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টা সময় আছে৷ সরকারে যেতে আগ্রহীদের শেষ পর্যন্ত কি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে? 

‘গত সংসদের বিরোধী দল ছিল অদ্ভূত’

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি এবার সত্যিকারের বিরোধী দলে বসুক এটা সরকারও চায়৷ এই নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এরশাদ সাহেবের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত৷ তাই কারুর সরকারের মন্ত্রিসভায় যাওয়ার সুযোগ নেই৷ এটা নিয়ে দলে কোনো দ্বিমত নেই৷ এবার আমরা বিরোধী দলেই বসছি৷ আর রওশন এরশাদ এবার বিরোধী দলীয় নেতা হতে চাননি বা বিরোধী দলের কোনো পদে থাকতে চাননি৷ তাই তাঁর নাম আসছে না৷''

ঐক্যফ্রন্টে জটিলতা

এদিকে, এবার বিএনপি'র প্রাধান্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ৭ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ ৫ জন বিএনপি এবং ঐক্যফ্যন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরাম থেকে ২ জন৷ ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র এবং বিএনপি'র মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনের পর স্পষ্ট করেই জানিয়েছিলেন, ঐক্যফ্রন্টের ৭ জনের কেউই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না৷

কিন্তু শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরাম থেকে যে দু'জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আলোচনা করে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নেব৷ আমার ধারণা, আমরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেব৷ তাঁরা অনেক প্রতিযোগিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন৷ গণফোরামের পক্ষ থেকে আমরা তাদের অভিনন্দন জানিয়েছি৷''