1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আশ্রয়প্রার্থীদের তৃতীয় দেশে পাঠাতে চায় জার্মানির সিডিইউ

২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

জার্মানির রক্ষণশীল বিরোধী দল দেশটিতে আশ্রয় প্রার্থনা করা অভিবাসীদের যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মডেল অনুসরণ করে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠাতে চায়৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এমন পরিকল্পনা বিষয়ে দ্বিধান্বিত৷

https://p.dw.com/p/4afGw
বক্তব্য রাখছেন সিডিইউ চেয়ারম্যান ফ্রিডরিশ ম্যাৎর্জ (বামে) ও তার মহাসচিব কার্স্টের লিনেনমান
সিডিইউ চেয়ারম্যান ফ্রিডরিশ ম্যাৎর্জ (বামে) ও তার মহাসচিব কার্স্টের লিনেনমান উভয়ই রক্ষণশীল অভিবাসন নীতির পক্ষে কথা বলেন ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance

রক্ষণশীল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র‍্যাটিক ইউনিয়ন - সিডিইউ ডিসেম্বরের শুরুতে 'বেসিক প্রিন্সিপলস প্রোগ্রাম' নামে একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেছে৷ এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করা অভিবাসীদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো হবে৷ ২০২৪ সালে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত রূপ পেতে পারে৷

খসড়াটি প্রকাশের পর সিডিইউ এর আইনপ্রণেতা ইয়েন্স স্পান দাবি করেছেন, এমন পরিকল্পনা জার্মানিতে 'অনিয়মিত অভিবাসন’ ব্যাপক হারে কমিয়ে দেবে৷ বড়দিনের আগে নয়ে ওসনাব্র‍্যুকার সাইটুংকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি এই কাজ চার, ছয় বা আট সপ্তাহ ধরে চালু রাখতে পারি, তাহলে (আশ্রয়প্রার্থনার) এই সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাবে৷

স্পান বলেন, এই পরিকল্পনার ফলে অভিবাসীরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নিরুৎসাহিত হবেন৷ অনেক দেশই আশ্রয়প্রার্থীদের প্রক্রিয়াকরণে রাজি হবে বলেও ধারণা তার৷ স্পান বলেন, ‘‘সম্ভবত রুয়ান্ডা রাজি হবে৷ ঘানাও রাজি হতে পারে৷ আমাদের এ বিষয়ে জর্জিয়া এবং মলডোভার মতো পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গেও কথা বলা উচিত৷''

রুয়ান্ডার সঙ্গে এমন একটি চুক্তি ২০২২ সালে করেছিল যুক্তরাজ্য৷ তবে এ বছরের নভেম্বরে ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট 'অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠালে তারা দুর্ব্যবহারের শিকার হতে পারেন' বলে উল্লেখ করে এই চুক্তি স্থগিতের পক্ষে রায় দেয়৷ আদালত মনে করে রুয়ান্ডার আশ্রয়ব্যবস্থা সুষ্ঠু এবং মানবিক কিনা, তা নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা নেই৷

একই পথে ডেনমার্কও

আদালতের রায়ের পরও অবশ্য ব্রিটিশ সরকার রুয়ান্ডা পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি৷ বরং কিছু সংশোধন করে রুয়ান্ডার সঙ্গে নতুন এক চুক্তি সই করেছে ব্রিটিশ সরকার৷ ব্রিটেন অবশ্য এরই মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে রুয়ান্ডাকে ২৪০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা) দিয়েছে৷ আগামী বছর দেয়ার কথা রয়েছে আরো ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৭০০ কোটি টাকা)৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত একজন অভিবাসীকেও সেখানে পাঠানো হয়নি৷

অন্য নানা সমস্যার পাশাপাশি ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট এটাও জানিয়েছে যে, ২০১৩ সালে রুয়ান্ডার সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি করেছিল ইসরায়েল৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার চুক্তিটি করার আগে আগের সেই চুক্তির বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখেনি৷

ডেনমার্কও একই ধরনের পরিকল্পনা করতে রুয়ান্ডার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তবে একা নয়, বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশকে সঙ্গে নিয়ে এমন চুক্তি করতে চায় ডেনমার্ক৷ গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে৷ পরিকল্পনা অনুসারে আশ্রয়প্রার্থীদের ইউরোপের সীমান্তেই যাচাইবাছাই করা হবে৷ আবেদন খারিজ হলে তাদের সেখান থেকেই ফেরত পাঠানো হবে৷

অভিবাসন নিয়ে তথ্যচিত্র- ভূ'মৃত্যু'সাগরের ওপারে

আশ্রয় পরিকল্পনা 'অর্থবহ পরিবর্তন আনতে পারবে না'

আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন ভিনদেশে প্রক্রিয়া করার পরিকল্পনা নতুন নয়৷ জার্মানির মধ্যবামপন্থি সরকার ২০২১ সালে জোট সরকারের রূপরেখায় 'বিশেষ ক্ষেত্রে অভিবাসীদের আবেদন যাচাই তৃতীয় দেশে প্রক্রিয়া করার বিষয়টি শরণার্থী কনভেনশন এবং ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা' তা যাচাই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷

এই লক্ষ্য অর্জনে নানা মডেল নিয়ে আলোচনা চলছে৷ তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, রুয়ান্ডা পরিকল্পনা এর মধ্যে আইনগত এবং কাঠামোগতভাবে সবচেয়ে কম কার্যকর হবে৷

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি অপেক্ষাকৃত বাস্তবসম্মত মডেল পাওয়া গেছে ইটালি এবং আলবেনিয়ার মধ্যে হওয়া চুক্তি থেকে৷ এই চুক্তির আওতায় ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় নেয়া হবে৷ সেখানে অবস্থান করে তারা ইউরোপে আশ্রয় আবেদন করবেন৷

এই চুক্তির নৈতিকতা এবং আইনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ তবে কিছু বিষয়ে শর্তও রাখা হয়েছে চুক্তিটিতে৷ যেমন, নারী, শিশু এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রে এই চুক্তি খাটবে না৷ যেসব অভিবাসীকে ইটালির জলসীমা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, তারাও এই চুক্তির আওতায় পড়বেন না৷ আলবেনিয়ায় গিয়ে যারা আশ্রয় আবেদন করার সুযোগ পাবেন, তাদের আবেদনও ইইউ এর আশ্রয় আইন মেনেই যাচাই করা হবে বলেও জানিয়েছেন ইটালির কর্মকর্তারা৷

আশ্রয় আবেদন গ্রহণ বা খারিজ, যাই হোক না কেন, আবেদন প্রক্রিয়া নিষ্পত্তির পর অভিবাসীদের নিয়ে যাওয়া হবে ইটালিতে৷ আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর হওয়া অভিবাসীরা ইটালিতে থাকবেন, খারিজ হওয়াদের ইটালি থেকে ফেরত পাঠানো হবে৷

কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু দ্বিধা রয়েছে৷ ইটালির রবার্ট শুমান সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ এর অভিবাসন নীতি বিষয়ক গবেষক লরেঞ্জো পিকোলি এর মতে, ‘‘এই পরিকল্পনার কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে৷ কারণ এটি অনেক ব্যয়বহুল এবং খুব কম মানুষের ক্ষেত্রেই এটি কাজে লাগবে্৷''

২০১৮ সালে ইউরোপীয় কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইইউ এর বাইরে ইইউ এর আইন কার্যকর করা যাবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ ফলে ইটালির দাবি অনুযায়ী আলবেনিয়াতে ইইউ এর আইন কার্যকর নাও হতে পারে৷

দ্বিতীয়ত, এটাও স্পষ্ট নয় যে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইটালি কিভাবে অভিবাসীদের আলাদা করে কাউকে আলবেনিয়া পাঠাবে, কাউকে ইটালি নিয়ে আসবে৷

তৃতীয় দেশে আশ্রয় আবেদন যাচাইয়ের আরেকটি পদ্ধতি এখনই কার্যকর রয়েছে৷ ইউএনএইচসিআর-এর রিসেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম এর আওতায় ট্রানজিট দেশেই (যেমন জর্ডান) আবেদন যাচাই করা হয়৷ আবেদন মঞ্জুর হলে ইউএনএইচসিআর সেই অভিবাসীকে কোন দেশ নিতে রাজি হয়, তা খোঁজার দায়িত্ব নেয়৷ এই শেষ ধাপেই তৈরি হয় জটিলতা৷

ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রায় ১৪ লাখ মানুষের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে্৷ এদের মধ্যে কোনো দেশে আশ্রয় পেয়েছেন কেবল ৬৩ হাজার৷ ২০২৩ সালে সেটেলমেন্টের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি৷

পিকোলি মনে করেন, রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়, বরং রাজনৈতিক৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা দেখাতে চায় যে তারা আশ্রয়প্রার্থীদের পরিস্থিতি কঠিন করে তুলতে চাচ্ছে৷ আর এর মাধ্যমে তারা নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়৷''

পিকোলি বলেন, ‘‘বাস্তবে আমরা যুক্তরাজ্য এবং রুয়ান্ডার চুক্তি থেকে দেখলাম, এই ধরনের প্রস্তাবগুলো আইনসম্মত নয় এবং যারা আসবেন, তাদের সংখ্যাতেও কোনো অর্থবহ পরিবর্তন আনবে না৷''

বেন নাইট/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান