‘আশ্বাস নয়, আমরা তিস্তায় পানি চাই’
৮ এপ্রিল ২০১৭তিস্তা ইস্যুর আশু সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য তিস্তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ আশা করি শিগগিরই এই ইস্যুর সমাধান হবে৷'' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর আয়োজিত যৌথ বিবৃতিতে মোদী এসব কথা বলেন৷
এদিকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২২টি চুক্তিতে সই করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ শনিবার এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠকের পর তারা এসব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন৷ এর মধ্যে তিস্তা নেই৷
তবে তিস্তা নিয়ে মোদীর আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষ৷ দু'জন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অন্তত এমনটাই মনে করেন৷ তারা বলেন, ‘‘কোন আশ্বাস নয়, বাংলাদেশের মানুষ তিস্তায় পানি চায়৷ সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের এই ধরনের আচরণ নেতিবাচক হিসেবেই দেখবেন বাংলাদেশের মানুষ৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হয়ত দেশে ফিরে একটা অস্বস্তিতে পড়বেন৷ কারণ তাকে এটা নিয়ে বলেতে হবে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহেদুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিস্তা যে হচ্ছে না, সেটা আমরা দু'একদিন আগেই জানতে পেরেছি৷ তারপরও বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করেছিল মোদী যেভাবে প্রটোকল ভেঙে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন সেভাবেই সবাইকে চমকে দিয়ে তিস্তা চুক্তিটা করে ফেলবেন৷ কারণ মমতাকে ডেকে আনায় বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের আশার সঞ্চয় হয়েছিল৷
‘‘কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা না হওয়ায় বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবেই দেখা হবে। তবে আমি আশা করব, প্রধানমন্ত্রী আরো দু'দিন সেখানে থাকবেন৷ এর মধ্যেই তারা আমাদের ইতিবাচক কিছু শোনাবেন৷''
আরেকজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ট প্রতিবেশীদের সম্পর্ক কিন্তু ভালো যাচ্ছে না৷ সম্প্রতি শ্রীলংকা ও নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে৷ আর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কতো আগে থেকেই খারাপ৷ এর মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল৷ তারা সেটা গ্রহণ করল না৷''
তিনি বলেন, ‘‘জানি না মোদীর উপদেষ্টারা তাকে কিভাবে বোঝাচ্ছেন৷ তিস্তা চুক্তি না হওয়াটা বাংলাদেশের মানুষ ভালোভাবে নেবেন না৷ প্রধানমন্ত্রীকেও এটা নিয়ে অস্তস্তিতে পড়তে হবে৷ দেশে ফিরে তিনি কী আনলেন সেটা নিয়েও কথা বলতে হবে৷ আপাতদৃষ্টিতে আমরা বড় কিছু পেলাম বলে মনে হচ্ছে না৷''
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে শনিবার আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যোগ দিয়েছেন৷ এজন্য মোদী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান তাঁর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দিয়েছেন বলে৷ মোদী বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, আমার সরকার ও শেখ হাসিনার সরকার তিস্তার পানি বণ্টন করতে চায় এবং আমরা তা করবো৷''
তিনি আরও বলেন, ‘‘শেখ মুজিব ভারতের প্রকৃত বন্ধু৷'' বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী হিন্দি অনুবাদ হওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী৷
‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ২০২১ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় প্রামাণ্য চিত্র তৈরি হবে৷ বাংলাদেশ-ভারত এখন সোনালি অধ্যায় অতিক্রম করছে,'' বলেন তিনি৷ বক্তব্যের শুরুতে মোদী ভাঙা বাংলায় বাংলাদেশের মানুষকে নববর্ষের শুভেচ্ছাও জানান৷
এদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘আমরা পানি পাবো না, সীমান্তে হত্যাও বন্ধ হবে না, বাণিজ্য করতে গেলে করও কমাবে না, আমরা সব দেবো কিন্তু কিছুই পাবো না এ কেমন বিচার? ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিম দেশ হলে প্রতিরক্ষা চুক্তি কেন?''
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘ভারতকে কি আমরা বা তারা আমাদের সন্দেহ করে? আমাদের দেশের সীমান্তের তিনভাগ জুড়ে তারা৷ তাই চীন, আমেরিকা, পাকিস্তান কারও পক্ষেই কি ভারতকে টপকে আমাদেরকে আক্রমণ করা সম্ভব?''
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২২টি চুক্তিতে সই করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বিচার সংক্রান্ত, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, লাইন অব ক্রেডিট, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌ চলাচল সংক্রান্ত চারটি সমঝোতা স্মারক বিনিময় হয়েছে দুই দেশের মধ্যে৷ এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীর হিন্দি সংস্করণ উন্মোচন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতি দেন৷ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সোনালী অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে বলে উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদী৷ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাঁকে ধন্যবাদ জানান৷
হাসিনা ও মোদী চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দু'দেশের মধ্যে বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কোলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল, ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেন৷ এদিকে দিল্লিতে অবস্থানকারী বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানান, শনিবার দুপুর নাগাদ মোট ৩৪টি চুক্তি সই হয়েছে৷ ২২টি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের আর ১২টি ব্যবসা সংক্রান্ত৷
এর আগে শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে দিল্লিতে পালাম স্টেশন বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সেখানে প্রটোকল ভেঙে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে স্বাগত জানান৷ প্রটোকল অনুযায়ী, ভারতের ভারী শিল্প, পাবলিক অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়া এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর কথা ছিল৷ তবে শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে যান৷