চিকিৎসক বনাম রোগী
১৮ এপ্রিল ২০১৪সামহয়্যার ইন ব্লগে মো. মোশাররফ লিখেছেন, ‘‘ডাক্তাররা তো রীতিমতো ভয় দেখানো শুরু করে দিয়েছেন, আমাদের বাঁচানোর বদলে মেরেই ফেলবেন৷''
তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন৷ লিখেছেন, ‘‘সেখানে গেলে দেখবেন একটা সুরম্য ছয় তলা ভবন৷ প্রায় ছয় বছর আগে এর কাজ শেষ হয়েছে৷ নতুন যন্ত্রপাতি বাক্স বন্দি৷ এটা এখনো কোনো অজ্ঞাত কারণে চালু হচ্ছে না৷
এমন অনেক উদাহরণ আছে৷'' তাঁর প্রশ্ন ‘‘এই যে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হলো এর দায় কার? এর জন্য ডাক্তাররা কি কখনো আন্দোলন করেছেন?''
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘‘আমি জানি অসুস্থ হলে হাসপাতালের বারান্দা থেকে বেড পর্যন্ত যেতে পারবো না৷ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবো৷ আমি আজ পর্যন্ত খুব কম লোককেই উকিল সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করতে শুনেছি৷ ওদের তো কেউ কেউ কসাই, জাত কসাই বলেন না?''
একই ব্লগে ইমতিয়াজ ইমন চিকিৎসকদের পক্ষে কথা বলেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘চীনে ডাক্তারদের পড়ালেখার পাশাপাশি কুংফু শেখাচ্ছে৷ রোগীদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা৷ আমাদের দেশেও বোধহয় এটা চালু করা উচিত৷ আমাদের দেশের অবস্থা তো আরো ভয়াবহ৷'' লিখেছেন, ‘‘গতকাল আমার ফেসবুকের স্ট্যাটাসে একজনের মন্তব্য, ‘কসাইগুলো মাংস খেয়ে খেয়ে মোটা হচ্ছে৷ মেরে ওদের চর্বি কমানো দরকার৷' কি ভয়াবহ চিন্তা ভাবনা! ডাক্তার পেটানোকে তারা প্রায় মহৎ কর্মের পর্যায়ে ফেলে দিয়েছে৷''
তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘গত কয়েকদিনে ফেসবুক এবং ব্লগে ডাক্তার বিরোধী অনেকগুলো পোস্ট এবং মন্তব্য পড়লাম৷ কারো বাবা, কারো ভাই, কারো কাজের বুয়া কিভাবে ডাক্তারদের অপচিকিৎসার শিকার হয়েছে তার বিশদ বর্ণনা উঠে এসেছে সবার লেখায়৷''
তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সব ডাক্তারই কি ভুল করেছে?''
যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের প্রতি অনুরোধ তাঁর অনুরোধ, ‘‘আপনারা একটা দিন কোনো একটি সরকারি হাসপাতালে কাটান৷ একজন ডাক্তার কি করছেন তা ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করুন৷ আমার বিশ্বাস, ডাক্তারদের প্রতি আপনার মনোভাব পাল্টাবে৷''
আমার ব্লগে সৌমেন চক্রবর্তী নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন৷ লিখেছেন, ‘‘আমি নিজে আইসিইউ-তে কাজ করি৷ এক নারী কয়েকদিন আগে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন৷ রোগীর ভেনটিলেশন লাগবে৷ কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বিশ্বের অন্য দেশে চিকিৎসকরা নিলেও, এখানে নিতে হয় রোগীর আত্মীয়দের৷ তাঁদের অনুমতি ছাড়া সম্ভব না৷ কিন্তু আত্মীয়দের কাউকে না পেয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম৷ কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ হলো, পরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে উনি মারা গেলেন৷ এরপর তাঁর ছেলে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললো৷ অথচ দরকারের সময় সে ছিল না৷''
তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘তাঁর মাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করা কি আমার অন্যায় ছিল? অথচ এর পুরস্কার হিসেবে সেদিন হাসপাতালে এসে ৩০-৩৫ জন অস্ত্রসহ আমারে ঘিরে ফেলেছিল৷ অকথ্য গালি-গালাজ করেছিল৷''
ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় অঞ্জন লিখেছেন, ‘‘যেসব ডাক্তার রাজনীতির নামে, ধর্মঘটের নামে সাধারণ রোগীদের কষ্ট দেন তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিত৷ ওঁদের চেয়ে দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলো অনেক উত্তম৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ