আমাদের চারপাশের জগত বদলে দিচ্ছে এআই
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪অন্যদিকে সেই প্রযুক্তির অপব্যবহারের দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই৷
২০২৩ সালে এআই বড় আকারে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রবেশ করেছে৷ চ্যাটজিপিটিথেকে শুরু করে মিডজার্নির মতো অনেক প্রয়োজনীয় অ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে৷ কিন্তু ভুয়া খবর ও নিয়ন্ত্রণের অভাব সম্পর্কে ভয়ভীতিও বেড়ে চলেছে৷
২০২৩ সালে এআই-এর ক্ষেত্রে উত্থানপতনের দিকে একবার নজর দেওয়া যাক৷ ড্যাল-ই ও মিডজার্নির মতো ছবি সৃষ্টির পরিষেবার কল্যাণে ২০২২ সালের শেষের দিকেই এআই-কে ঘিরে উত্তেজনা শুরু হয়েছিলো৷ আচমকা শুধু বর্ণনার মাধ্যমেই যে কোনো ছবি সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল৷
২০২৩ সালে এআই-এর মাধ্যমে সৃষ্টি করা ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়েছে৷ এমনকি এক প্রতিযোগিতায় বিচারকমণ্ডলী না বুঝেই এমন এক ছবিকে পুরস্কৃত করেছেন৷
সেলফি ছবিকে চাকুরির আবেদনের সিভির উপযুক্ত করে তুলতে ‘রেমিনি'-র মতো এআই পোর্ট্রেট অ্যাপ ভাইরাল হয়েছে৷ তবে লিঙ্গ বৈষম্য ও ইউরোপ-কেন্দ্রিক ছবি সৃষ্টির কারণে এমন সব অ্যাপ বিতর্কও সৃষ্টি করেছে৷
যেমন লেন্সা নামের অ্যাপ মহাকাশচারী, রক তারকা বা সুপারহিরো হিসেবে যে কোনো মানুষের পোর্ট্রেট ছবি সৃষ্টি করতে পারে৷ তবে ডিডাব্লিউ সহকর্মী রজার ও আদ্রিয়ানার উপর পরীক্ষা চালিয়ে একেবারে ভিন্ন ফল পাওয়া গেল৷ রজার নিজের একাধিক পুরুষালি সংস্করণ পেলেও কলম্বিয়া থেকে আসা আদ্রিয়ানার ছবিতে ত্বকের রং অনেক বেশি ফরসা দেখাচ্ছে৷ তার চোখের রং নীল এবং অনেক ছবিতে তাকে স্বল্প পোশাকে দেখা যাচ্ছে৷ অথচ সে যে সব সেলফি আপলোড করেছিল, তাতে তার পোশাক মোটেই সে রকম ছিল না৷
এছাড়া ‘ডিপফেক ইমেজ' বা ভুয়া ছবির কারণে এআই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷ ডনাল্ড ট্রাম্পকে পুলিশ গ্রেফতার করছে, এমন ডিপফেক ছবির কথা মনে আছে? এমন ছবি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের আবেগ নিয়ে খেলে রাজনৈতিক শিবিরে আলোড়ন তোলা যায়৷
তাছাড়া অনেক শিল্পীও এমন ইমেজ জেনারেটর নিয়ে খুশি নন৷ তাঁরা নিজেদের সৃষ্টিকর্ম অনলাইনে দেওয়ার পর তাদের সম্মতি ছাড়াই এআই মডেল ট্রেনিংয়ের কাজে সেগুলি ব্যবহার করা হয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত এআই ইমেজের কপিরাইট সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি৷
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে চ্যাটজিপিটি প্রকাশ করা হয়৷ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে এই পরিষেবার ব্যবহারকারীদের সংখ্যা দশ কোটি ছাড়িয়ে গেছে৷ কিছু সময়ের জন্য কনজিউমার অ্যাপ হিসেবে সেটি সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধির রেকর্ড দখল করেছিল৷ মাইক্রোসফট চ্যাটজিপিটি সৃষ্টিকারী ওপেনএআই কোম্পানিতে বিশাল বিনিয়োগ করেছে৷ বিং নামের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে সেই চ্যাটবট জুড়ে এই কোম্পানি বিং চ্যাট সৃষ্টি করে৷
বর্তমানে অনেক মানুষ ইমেল, কোডিং ও গবেষণার জন্য নিয়মিত বিং এবং অন্যন্য চ্যাটবট ব্যবহার করেন৷ ব্রাজিলে এমনকি চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে লেখা একটি আইনও কার্যকর করা হয়েছে৷ কিন্তু কখনো ভুল উত্তরের কারণে এআই চ্যাটবটগুলির সমালোচনা করা হয়েছে৷ সেই অবস্থাকে ‘হ্যালুসিনেশন' মা মতিভ্রম বলা হয়৷ এভাবে এমন পরিষেবা কার্যত ‘ফেক নিউজ' বা ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেয়৷ তাছাড়া অনেক মানুষ এআই মডেলে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য ভরার বিষয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন৷ ফলে ইটালিতে কিছু সময়ের জন্য চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷
২০২৩ সালে আরেকটি ‘গেম চেঞ্জার' এসেছে৷ কৃত্রিম অডিও, কণ্ঠের নকল ও সৃজনশীল ভাবনার ফসল হিসেবে কিছু মজাদার ভিডিও আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে৷ তাছাড়া স্পটিফাইয়ের ‘ভয়েস ক্লোনিং'-এর মতো টুল পডকাস্টারদের ক্ষমতা বাড়াতে চায়৷ বিভিন্ন ভাষায় তাদের কণ্ঠের নকল করে পডকাস্টাররা এমন মানুষের নাগাল পাচ্ছেন, যাদের কাছে অন্যভাবে পৌঁছানো সম্ভব হতো না৷
কিন্তু কণ্ঠ ক্লোন করার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিপফেকও সৃষ্টি করা হয়েছে৷ যেমন ড্রেক ও দ্য উইকেন্ড নামের গায়কদের কণ্ঠ নকল করে ‘হার্ট অন মাই স্লিভস' নামের গান সৃষ্টি করা হয়েছে৷ তাঁদের রেকর্ড কোম্পানি ‘ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ' সে বিষয়ে মোটেই খুশি হয় নি৷ কপিরাইট লঙ্ঘনের দায়ে মামলার জের ধরে শেষ পর্যন্ত সেই ট্র্যাক সরিয়ে নিতে হয়েছে৷
এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের ভুয়া এআই অডিও ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে নির্বাচনি প্রচার চালানো হচ্ছে৷
ইয়ানিক বাইয়ারলাইন/এসবি