1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডাবকৃত সিরিয়াল আর নয়!

১ ডিসেম্বর ২০১৬

বিদেশি ডাবকৃত সিরিয়াল না দেখানোসহ পাঁচ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৩০ নভেম্বর দিনব্যাপী সমাবেশ করেছে দেশের টেলিভিশন মিডিয়ার সম্মিলিত প্লাটফর্ম ফেডারেশন অফ টেলিভিশন প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন এফটিপিও৷

https://p.dw.com/p/2TZRb
বাংলাদেশে টিভি সিরিয়াল সুলতান সুলেমান
ছবি: Deepto TV Bangladesh

সমাবেশ শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এফটিপি-র আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ৷ ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি না মানলে ১লা জানুয়ারি থেকে আন্দোলন জোরদারের ঘোষণা দিয়েছেন তারা৷ ১৬ই ডিসেম্বর থেকে আর বিদেশি ডাবকৃত সিরিয়াল না দেখানোর দাবি জানানো হয়েছে সমাবেশ থেকে৷ বলেছেন, যেসব চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার হবে সেই চ্যানেলের সামনে অবস্থান নেবে শিল্পী-কলাকুশলীরা৷

এই কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এর পক্ষে বিপক্ষে চলছে আলোচনা৷

সুদীপ্ত সালাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আমরা কি ভুলে গেছি বিটিভিতে যখন ম্যাকগাইভার, দ্য এ টিম, টাইম ট্র্যাক্স, র‍্যাভেন, টিপু সুলতান, আলিফ লায়লা প্রচারিত হতো তখন বাংলাদেশের টিভি কলাকুশলীদের পেটে লাথি পড়েছিল বলে শুনিনি৷ এখন বিদেশি ভালো সিরিয়াল কী সমস্যা করলো! সমস্যা হলো তখন বাংলাদেশে অসাধারণ সব অনুষ্ঠান তৈরি হতো – তাই প্রতিযোগিতায় ভয় পেতেন না তখনকার মুস্তফা মনোয়ার, আবদুল্লাহ আল মামুন, হুমায়ূন আহমেদরা৷ আর এখন? বলার দরকার নেই৷''

রুবেল আবুল হাসান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে সুলতান সুলেমানের কারণে অনেক দর্শক ভারতীয় সিরিয়াল থেকে দেশের টেলিভিশনে ফিরেছেন শুনছি৷ আপনাদের আপত্তি কি সেখানেই?''

রুদ্র রোথি তাঁর ফেসবুকের দেয়ালে লিখেছেন, ‘‘মোটা অঙ্কের বিনিময়মূল্য দেখে দাঁত কেলিয়ে থাকা আর পয়সার আকালে সংস্কৃতি ধ্বংসের চেঁচামেচি করারা আর যাহোক শিল্পী না৷ টেলিভিশন নামক বোকা বাক্সে দাঁত কেলানো পয়সার আদান-প্রদানে বঞ্চিতদের চেঁচামেচি শুনতে শুনতে সকালের চড়াইয়ের ডাক শোনার আমেজটা নষ্ট হচ্ছে বড়!''

সোহরাব সুমন লিখেছেন, ‘‘এখন যদি কেউ এই একই ধোঁয়া তুলে অনুবাদের বই বন্ধ করতে বলে! বন্ধ করে দিতে বলে অনুবাদ সাহিত্য চর্চা?! তাহলে তো অনুবাদ সাহিত্য চর্চাতেও ধ্বস নামবে৷ এমনকি আগেকার অনেক রাজাবাদশাদের পর্যন্ত তাদের নিজ নিজ দেশের ভাষার সমৃদ্ধির জন্য রাজ্য জয়ে অর্জিত যাবতীয় সম্পদ আর অর্থকড়ি মানে টাকা অনুবাদের পেছনে লগ্নি করেতে দেখা যায়৷ অথচ হাজার বছরের সমৃদ্ধ ভাষা নিয়ে আমরা কী মুর্খামিরই না পরিচয় দিচ্ছি! অনুবাদের এমন চলমান কর্মকাণ্ড যদি বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে তো পুরো জাতীর সাধারণ জনতার বড় একটি অংশ অনুবাদ সাহিত্যে সমৃদ্ধ হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়, প্রকারান্তরে যা জাতীর মেধা, মনন আর ভাষার সমৃদ্ধির পথে বাঁধা দেয়া বোঝায়! আমরা কি যৌক্তিকভাবে পাল্লা দেয়াটা কখনও শিখবো না, নাকি চিরকাল কোটায় চাকরির মতো হতদুর্বলকে লাইফসাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাবো?''

রোকন রকি লিখেছেন, ‘‘এদিকে এক দল নেমেছে দেশীয় শিল্প সংস্কৃতি রক্ষা করতে৷ এরা মনে করছে দেশীয় চ্যানেলে বিদেশি শিল্প প্রচার হলে দেশীয় সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে৷ এর মানে দেশীয় সংস্কৃতির জন্ম মৃত্যু ঐ ১৫-২০টা টেলিভিশন চ্যানেলের হাতে৷ এই গুটিকয় টিভি চ্যানেল ও শিল্পী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের হাতে আছে শিল্প সংস্কৃতি৷ তাহলে শুধু ডাবিং করা বিদেশি সিরিয়াল সিনেমায় সমস্যা কেনো? বিদেশি গল্প উপন্যাসও তো সংস্কৃতি ধ্বংস করতে পারে৷ কিন্তু না, হ্যারিপটার বা পাওলো কোহেল পড়া বিশাল সংস্কৃতি বোদ্ধার পরিচায়ক৷ যাদের আরো নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আন্দোলনে নামার কথা ছিল তারা আন্দোলনে নামছে সংস্কৃতি বাঁচাতে৷''

সোহেল হাসান গালিব লিখেছেন, ‘‘আজকাল নটরাজ মামুনুর রশীদের কথাগুলো কেমন যেন লাগে৷ ঠিক বোঝাতে পারব না৷ মনে হয় যাত্রার ডায়ালগ শুনতেছি৷ যাত্রা-টাইপের দেশপ্রেম আমাদের সংস্কৃতিকর্মীদের মূল চালিকা – এমনটা হইলে সত্যিই দুঃখের কথা৷ আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, নটরাজের আপত্তিটা কোথায়? ডাবিংয়ে? না, বিদেশি সিরিয়ালে? বিদেশি সিরিয়ালে আপত্তি থাকলে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হন না কেন? নাকি ডাবিং সিরিয়াল স্টার জলসার ভাত মারতেছে বইলা এই আর্তনাদ!

চারু পিন্টু বর্তমান নাটক ও অভিনয় শিল্পীদের কথা লিখেছেন৷ তিনি বলছেন, ‘‘টেলিভিশনের এখনকার অনেকাংশ নাটক বস্তাপচা গল্প আর অভিনয়ে ভরা৷ এগুলো নিয়ে ডিরেক্টররা তামাশা করছে কেননা মঞ্চ থেকে আসার চেয়ে বিজ্ঞাপনের কর্মিরা দারুন দাম হাঁকাচ্ছে নাটকে৷ বিদেশি নাটক বা সিরিয়াল জানলে কিসের ক্ষতি? তাহলে আসুন সব অনুবাদ বয়কট করি? ম্যাগবেথ, মহাভারত পড়া বন্ধ করি? হিসকক, ইবসন, শেক্সপিয়র অনুবাদ পড়া বন্ধ করি? বিশ্ব সাহিত্য পড়া বন্ধ করি? যতসব আজগুবি চিন্তাধারা৷ কেন বাংলা নাটক বিদেশি নাটককে ছাপিয়ে যেতে পারছেন না?  এখন আর দেখিনা বহুব্রিহী, কোথাও কেউ নেই, শংসপ্তক, দেখিনা রূপনগর, মাটির মায়া নামের বিখ্যাত নাটকগুলো৷

নাট্যকার শিবু কুমার শীল লিখেছেন দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত সুলতান সুলেমান প্রসঙ্গে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘বিদেশি ডাবিং সিরিয়াল কত ‘পাওয়ারফুল' তা প্রমাণিত হলো৷ একই সাথে এটাও প্রমানিত হলো যে, যারা ভারতীয় সিরিয়ালের আদলে বড় বড় লাল টিপ আর শাড়ি-গয়না পরিয়ে এক ধরনের ‘মিমিক্রি' আর চলবে না৷ টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির এই অচলায়তন ভাঙতে হলে সৎ আর নিষ্ঠাবান তরুণ নির্মাতা, কলা কুশলীদের এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে৷ আজকে প্যাকেজ নাটক কোথায়? বড় জোর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বাস যাত্রীদের মনোরঞ্জনের উপাদান মাত্র৷ একটা সুষ্ঠু বাস্তবানুগ টেলিভিশন নীতিমালা এখন সবচেয়ে জরুরি৷''

আহমেদ তালঅত তেহজীব লিখেছেন, ‘‘সুলতান সুলেমান সহ ডাবিংকৃত বিভিন্ন সিরিয়ালের বিরুদ্ধে তেলের খনি বিটিভির কলাকুশলীরা শহীদ মিনারে গিয়ে হাউকাউ করেছে? এইসকল ডাবিংকৃত সিরিয়াল বাংলাদেশের আর্টিস্টদের জন্য হুমকি নাকি হিন্দি সিরিয়ালগুলোর জন্য হুমকি সেটা বুঝতে পারছি না৷''

সংকলন: অমৃতা পারভেজ

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান