আইনি পথে ওষুধ হিসেবে গাঁজা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯গেরিলা-অধ্যুষিত এলাকার মাঝে কোরিন্টো গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ১৩,০০০৷ গত ৫০ বছরে সেখানে উপার্জনের কোনো প্রচলিত পথ ছিল না৷ এবার চিকিৎসাবিদ্যার স্বার্থে গাঁজার চাষের ফলে উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে৷
মেয়র এডওয়ার্ড গার্সিয়া নিজে নতুন এই কর্মক্ষেত্র নিয়ে খুশি৷ প্রায় ১২টি কৃষি সমবায় এর মধ্যেই ওষুধ কোম্পানিগুলির সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোরিন্টোর পরিস্থিতি বদলাতে চাই৷ অপরাধীদের চক্র, মাদক চক্র, মাফিয়ারা অনেক হিংসালীলা চালিয়েছে৷ এবার তাদের সরিয়ে আমরা সমবায় ও কোম্পানি আনতে চাই৷''
আইনি পথে ওষুধ হিসেবে গাঁজা চাষ কলম্বিয়ার ভবিষ্যতের জন্য নতুন সুযোগ বয়ে আনছে৷ দেশ-বিদেশের ৯১টি কোম্পানি এর মধ্যেই চাষের জন্য লাইসেন্স পেয়েছে৷ ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম কোম্পানি হিসেবে ক্যানাডা ও কলম্বিয়ার যৌথ উদ্যোগ ফার্মাসিয়েলো এই অনুমতি পায়৷ মেডেয়িন শহরের কাছেই তাদের সদর দফতর৷
কোম্পানির প্রধান ফেডেরিকো কক-কোরেয়া বলেন, আধুনিক উৎপাদন প্লান্ট গড়ে তুলতে তাঁরা প্রায় ৪ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন৷ কলম্বিয়ার জলবায়ু, উর্বর মাটি ও গেরিলা বাহিনীর সঙ্গে শান্তি চুক্তির ফলে বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ওষুধ হিসেবে গাঁজা কলম্বিয়ার অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে৷ গোটা বিশ্বে এর বাজারের সম্ভাবনা প্রায় ৪,০০০ কোটি ডলার৷ বর্তমান পরিস্থিতিতেই কলম্বিয়া আন্তর্জাতিক বাজারের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দখল করার ক্ষমতা রাখে৷''
কোম্পানি তার নিজস্ব গ্রিনহাউসেই গাঁজা চাষ করছে৷ তবে আইন অনুযায়ী তাদের কমপক্ষে ১০ শতাংশ গাছ ছোট চাষির কাছ থেকে কিনতে হয়৷ সে কারণে ফার্মাসিয়েলো কোম্পানি কোরিন্টো-য় এক সমবায়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷ ৬৩টি পরিবার সেই সমবায়ের সদস্য৷
কলম্বিয়ার সরকার সেই সঙ্গে স্থির করে দিয়েছে, যে দেশের স্বার্থে কাঁচামাল হিসেবে গাঁজা রপ্তানি করা যাবে না৷ কোরিন্টো উপত্যকায় আখের চাষ হলেও খুব কম মানুষ তা থেকে যথেষ্ট উপার্জন করতে পারে৷ এবার আইনি পথে গাঁজা চাষের কারণে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এডওয়ার্ড গার্সিয়া বলেন, ‘‘এখানে আখের চাষ হয়৷ ৮ হেক্টরজুড়ে চাষের ফলে মাত্র এক জনের কর্মসংস্থান হয়৷ অন্যদিকে ওষুধ হিসেবে গাঁজা চাষের ফলে ১০ থেকে ১৫ জনের কর্মসংস্থান হয়৷ প্রথম বছরেই আমরা এই অঞ্চলে এক থেকে দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের আশা করছি৷''
অ্যারমান নোরেনিয়া ড্রাগ কোম্পানির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক চান না৷ একশোরও বেশি চাষিদের নিয়ে তিনি এক সমবায় গড়ে তুলেছেন৷ এক বছর অপেক্ষার পর তাঁরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে চাষের লাইসেন্স পেয়েছেন৷ আইনি পথে আয়ের পথ খুলে যাবার ফলে তিনি নিজের পরিবার ও ছেলের জন্য আবার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন৷ গাঁজা চাষি অ্যারমান নোরেনিয়া বলেন, ‘‘আমার খুব সাধ, সে যেন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে পারে৷ পেশাগত শিক্ষা পেলে সে হয়ত ভবিষ্যতে আমাদের এখানে কাজ করতে পারবে৷ তবে বেআইনি পথে তাকে কাজ করতে হবে না৷ বিপদ ও আশেপাশে অপরাধীদের উপস্থিতি ছাড়াই সে থাকতে পারবে৷''
কোরিন্টো-য় অনেক পরিবার এবার আইনি পথে উপার্জনের উপায় খুঁজে পেয়েছে৷ফলে গোটা অঞ্চলে শান্তির সম্ভাবনাও বেড়েছে৷
বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মাদক মাফিয়া কোণঠাসা হয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে৷ রাতে তাদের উজ্জ্বল গাঁজা খেত চোখে পড়ে৷ তখন টের পাওয়া যায়, যে মাফিয়ার প্রভাব পুরোপুরি দূর হয়নি৷
কারেন নাউনডর্ফ/এসবি