দু’জনকে ফাঁসি দিল জর্ডান
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫গত ডিসেম্বর থেকে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস)-এর হাতে বন্দি ছিলেন জর্ডানের তরুণ বৈমানিক মুয়াত আল-কাসেসবেহ৷ সিরিয়ায় আইএস-এর বিরুদ্ধে হামলা পরিচালনার সময় তাঁর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়৷ প্রাণ বাঁচালেও আইএস-কে এড়াতে পারেননিন৷ জাপানের দুই নাগরিকও তখন আইএস-এর হাতে বন্দি ছিলেন৷ তাঁদের জন্য মুক্তিপণ হিসেবে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার দাবি করা হয়৷ টাকা না পাওয়ায় একজনকে মেরে ফেলে৷ অন্যজন, অর্থাৎ সাংবাদিক কেনজি গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক মুয়াত আল-কাসেসবেহ-এর প্রাণের বিনিময়ে তখন জর্ডানে আটক নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই-এর মুক্তি দাবি করে আইএস৷ দাবি আদায় না হওয়ায় কেনজি গোতোকে হত্যা করে ভিডিও প্রচার করে ইরাক এবং সিরিয়ার বেশ বড় একটি এলাকা দখল করে নেয়া জঙ্গি সংগঠনটি৷
বৈমানিক মুয়াত আল-কাসেসবেহকে হত্যা করে মঙ্গলবার তার ভিডিও-ও প্রচার করে আইএস৷ জানানো হয় মুয়াতকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে৷ জর্ডানে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়৷ মুয়াতের বাড়ির কাছে কয়েকটি সরকারি কার্যালয়ে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা৷ বিক্ষুব্ধরা ‘মৃত্যু, মৃত্যু, মৃত্যু চাই, দায়েশের মৃত্যু চাই' স্লোগান দিচ্ছিলেন৷ আরবি ভাষায় ইসলামিক স্টেটকে বলা হয় ‘দায়েশ'৷ এই শব্দটি জর্ডানের অনেক মানুষই গত ডিসেম্বর থেকে ঘৃণা এবং আতঙ্ক নিয়ে উচ্চারণ করছেন৷ তবে অনেকে মুয়াতের হত্যার জন্য জর্ডান সরকারকেও দায়ী মনে করেন৷ তাঁদের ধারণা, মুয়াতকে মুক্ত করার জন্য যতটা উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল, ততটা উদ্যোগী হয়নি সরকার৷
সরকারের পক্ষ থেকে সে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে৷ জানানো হয়েছে, মুয়াতকে মুক্ত করার জন্য ২০০৫ সালে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক সাজিদা আল-রিশোয়াইকে মুক্তি দিতেও রাজি হয়েছিল সরকার৷ কিন্তু আইএস মুয়াত যে সত্যি সত্যি জীবিত আছে, তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়৷ এক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার হত্যা করার কথা জানানো হলেও মুয়াতকে আসলে প্রায় এক মাস আগে হত্যা করা হয়েছিল৷
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করে দেশে ফিরেছেন বাদশাহ আব্দুল্লাহ৷ বুধবার ভোরে মুয়াতকে হত্যার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে দুই জঙ্গি সাজিদা আল-রিশোয়াই এবং জিয়াদ কারবোলিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়৷ চল্লিশোর্ধ নারী সাজিদা ২০০৫ সালে আম্মানের এক বিলাসবহুল হোটেলে চালানো সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ছিলেন৷ আল-কায়েদার চালানো সেই হামলায় ৬০ জন নিহত হয়৷ সাজিদারও তখন মৃত্যুবরণ করার কথা ছিল৷ কিন্তু আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী হিসেবে সেখানে গেলেও কোমরে বাঁধা বোমাটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় তিনি বেঁচে যান৷ পরে ইরাকি আল-কায়েদার এই নারী যোদ্ধাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় জর্ডানের আদালত৷ ইরাকি আল-কায়েদার আরেক সদস্য জিয়াদ কারবোলিক-এর বিরুদ্ধেও ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছিল৷ বুধবার ভোরে রাজধানী আম্মান থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের সোয়াকা কারাগারে দু'জনকেই ফাঁসি দিয়ে আইএস-কে মুয়াত আল-কাসেসবেহ হত্যার জবাব দিয়েছে জর্ডান সরকার৷
এসিবি/ডিজি (এপি, রয়টার্স)