আইএস-এ যোগ দেয়া ব্যক্তিরা ফিরলে গ্রেপ্তার হবে
২৭ মার্চ ২০১৯তাদের একটি তালিকাও পাঠানো হয়েছে৷ ফিরলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে৷
‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট’ বা সিটিটিসি-র প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৪০ জনের একটি তালিকা আমরা বিমানবন্দরসহ সীমান্ত এলাকার বন্দরগুলোতে পাঠিয়েছি৷ তারা যে ফিরতে পারবেনা তা নয়৷ ফিরলেই যাতে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেয়া যায় সেজন্যই এই তালিকা পাঠানো হয়েছে৷ আর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকেও ওই তালিকা দেয়া হয়েছে তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারির জন্য৷’’
তিনি বলেন, ‘‘সবাই যে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে গিয়ে আইএস-এ যোগ দিয়েছে, তা নয়৷ একটি অংশ অন্যদেশ থেকেও দিয়েছে৷ তারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত৷’’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘‘এই তালিকা বেশ আগে দেয়া৷ আমরা সময় সময় এটা আপডেট করি৷ আমাদের জানা মতে আমরা যে তালিকা দিয়েছি তাদের একটি অংশ মারা গেছে৷ মূলত মিসিং-এর সূত্র ধরেই আমরা ওই তালিকা করেছিলাম৷ সরাসরি বাংলাদেশ থেকে গেছে এমন সংখ্যা কম, ৩০-৩৫ জন হবে৷ তবে বেশি গেছে বাইরের দেশ থেকে৷’’
জাতিসংঘের হিসেবে সিরিয়া ও ইরাকে আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করতে ১১০টি দেশ থেকে ৪০ হাজারেরও বেশি বিদেশি যোদ্ধা গিয়েছে৷ এরমধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে ৮০০, মালয়েশিয়া থেকে ১৫৪, ফিলিপাইন থেকে ১০০ এবং বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে ৪০ জন৷
সিরিয়ায় আইএস-এর পতনের প্রেক্ষাপটে ইউরোপের যে আইএস যোদ্ধারা ওইসব দেশে ফিরতে চেয়েছেন তাদের ব্যাপারে নেতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছে ওইসব দেশ৷
এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘যদি কোনো সন্ত্রাসী যে-কোনোভাবে বাংলাদেশে আসে তাহলে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেয়া হবে৷’’
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগম, যিনি লন্ডন থেকে ২০১৫ সালে সিরিয়া গিয়ে আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করেন এবং এখন ব্রিটেনে ফিরতে চেয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন তাঁর প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘সে কখনোই বাংলাদেশে ছিলনা৷ সে বাংলাদেশের নাগরিক না৷’’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘যারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিক নয় তাদের বাংলাদেশি বলা ঠিক হবেনা৷ আর বাংলাদেশি যাদের বলা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই এরকম৷ আবার কেউ কেউ আছে যারা তৃতীয় কোনো দেশ গিয়ে ব়্যাডিকালাইজড হয়ে সিরিয়া বা ইরাক গেছে৷’’
জঙ্গি বিষয়ক গবেষক এবং বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার নুরুজ্জামান লাবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে যারা সিরিয়া গিয়ে আইএস-এ যোগ দিয়েছে তাদের কেউ যে ফেরত আসতে চাইছে এরকম সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো নেই৷ তবে সিরিয়ার বাঘুজেও যেহেতু আইএস-এর পতন হয়েছে তাই একটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে যারা বাংলাশে থেকে সিরিয়া গিয়ে আইএস যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছে তারা এখন কোথায় যাবে? বাংলাদেশ থেকে যারা গিয়েছে তাদের তালিকা আছে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের কাছে৷ কিন্তু কেউ কেউ আছে যাদের দুই দেশের পাসপোর্ট আছে৷ বাংলাদেশ এবং যে দেশ থেকে তারা যুদ্ধ করতে গেছে সেই দেশের৷ তারা কিন্তু বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে৷ আবার যদি কেউ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে প্রবেশ করে, সে আশঙ্কাও আছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘সিরিয়া গিয়ে যুদ্ধে তাজউদ্দিন নামে একজন নিহত হয়েছিলেন৷ তার বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ড দুই দেশেরই পাসপোর্ট ছিল৷ যে ফিনল্যান্ড থেকে সিরিয়ায় গিয়েছিল৷’’
নুরুজ্জামান লাবু আরো জানান, ‘‘আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানি বাংলাদেশ থেকে ৫০ জনের বেশি সিরিয়া যায়নি৷ তাদের মধ্যে কাজী সোহান নামে একজন বাংলাদেশে ফিরে আসার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১৫ সালে সে ফিরে আসে৷ এছাড়া আরো যারা সেখানে গিয়েছে তাদের মধ্যে আছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাপানি নাগরিক ওজাকি, জুন্নুন শিকদার, দুই ভাই ইব্রাহিম শিকদার ও জোনায়েদ শিকদার, ডা. আরাফত, তাজউদ্দিন৷’’
২০১৬ সালে হলি আর্টিজান হামলার পর মূলত বাংলাদেশে জঙ্গিদের আইএস যোগাযোগ স্পষ্ট হয়৷ তখনই বাংলাদেশ থেকে যারা সিরিয়ায় গেছে তাদের তথ্য প্রকাশ হতে থাকে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘বাংলাদেশকে এখন আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে৷ কারণ সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা এখন বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে৷ এছাড়া আরো কোনো দেশে বিশেষ করে ইরাক ও আফগানিস্তানেও বাংলাদেশি কোনো জঙ্গি থাকলে তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন৷’’