মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরার গল্প
১৮ জুলাই ২০১৮২৩ জুন থেকে ৯ জুলাই – টানা ১৭ দিন উত্তর থাইল্যান্ডের এক গুহায় আটক ছিল ‘' ফুটবল দলের ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের ২৫ বছর বয়সি কোচ৷ তিন দিনের ঝুঁকিপূর্ণ উদ্ধার অভিযান শেষ হয় ১০ জুলাই৷ শেষ হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৩টি প্রাণ বাঁচানোর মানবিক দায়িত্ব৷ ১০ জুলাই সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও অবশ্য তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি৷ গুহা থেকে উদ্ধার করেই সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে৷ কিশোর ফুটবলারদের পরিবার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আপত্তি থাকায় গত এক সপ্তাহ সংবাদমাধ্যমও জানতে পারেনি বিভীষিকাময় ১৭টি দিনের কথা৷ মঙ্গলবার অবশেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন থেকে সারা দেশে সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেয় ফুটবলাররা৷ সেই সুবাদে ওই ১৭ দিনের অজানা কথাগুলোও জানা হয়ে যায় সবার৷
‘থাইল্যান্ড মুভস ফরোয়ার্ড' নামের সরকারি এক অনুষ্ঠানের সেটটি সাজানো হয়েছিল পূর্ণাঙ্গ এক ফুটবল মাঠের আদলে৷ সেখানে ফুটবল নিয়ে এসে সেই ফুটবলে লাথিদিয়েই কথা শুরু করে কিশোর ফুটবলাররা৷ নিজেদের বেঁচে থাকার গল্প শোনানোর আগে তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে প্রাণ দেয়া এক উদ্ধারকর্মীর প্রতি শ্রদ্ধাও জানিয়েছে তারা৷
অনুষ্ঠানে এসে এক ফুটবলার জানায়, আটকে পড়ার পর তার মাথা যেন ঠিকভাবে কাজ করছিল না, অনেক যুদ্ধের পর বেঁচে থাকাটা তার জন্য এখন অলৌকিক ঘটনা৷ তার ভাষায়, ‘‘ওটা সম্পূর্ণ অলৌকিক ঘটনা৷ (আটকে পড়ার সময়) আমার মস্তিষ্ক খুব ধীরে ধীরে কাজ করছিল, আমরা তো ১০ দিন গুহায় আটকে ছিলাম৷ বুঝতে পারছিলাম না কী বলবো!''
১১ থেকে ১৬ বছর বয়সি ১২ জন ফুটবলার এবং তাদের কোচের ১৭ দিন ধরে শুধু একটা চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে – বাঁচতে হবে আর বাঁচতে হলে গভীর গুহা থেকে বেরোনোর পথ বের করতেই হবে৷ গুহায় তখন জল থৈ থৈ৷ আরেকবার বৃষ্টি শুরু হলেই পানির উচ্চতা বাড়বে আর তাতেই সলিল সমাধি হবে সবার৷ তাই কিশোরদের কেউ কেউ গুহা খুঁড়ে পথ করার চেষ্টাও করেছে৷ সঙ্গে কোনো খাবার ছিল না৷ তাই না খেয়ে খেয়ে শরীর তখন ভীষণ দুর্বল৷ মন তবু বলছিল, ‘‘বের হওয়ার পথ করতে পারবোই৷'' কোচ জানালেন, ‘‘যখন মনে হলো কর্তৃপক্ষ আমাদের উদ্ধার করবে সেই অপেক্ষায় বসে থাকা ঠিক হবে না, তখন আমরা নিজেরাই মাটি খুঁড়ে পথ করার চেষ্টা শুরু করি৷'' এক কিশোর জনায়, অনেক চেষ্টায় সে তিন ফুট খুঁড়তে পেরেছিল৷
শেষ পর্যন্ত আর মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে আসার অসম্ভব চেষ্টায় প্রাণপাত করতে হয়নি তাদের৷ তার আগেই সফলভাবে শেষ হয় কষ্টসাধ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ উদ্ধার অভিযান৷ তারপর থেকে চলেছে চিকিৎসা৷ সাত দিনের চিকিৎসায় এখন সবাই বেশ সুস্থ৷ বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে এক ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বলেছেন, ‘‘আমরা অনেকগুলো ডাক্তারি পরীক্ষা করে দেখেছি ওরা এখন সুস্থ আছে৷ এখন সমাজের যে কোনো চাপ সহ্য করার মানসিক শক্তিও হয়েছে ওদের৷ আর কোনো চিন্তা নেই৷ ওরা এখন বাড়ি ফিরতে পারে৷''
এসিবি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)