অবশেষে গ্রেপ্তার শেখ শাহজাহান
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল(এডিজি) দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার মিনাখাঁ থানায় বসে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ''বামনপুকুর থেকে শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।''
বৃহস্পতিবার শাহজাহানকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাকে দশদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। শাহজাহান সেখানে একটা কথাও বলেনি। বিচারকের নির্দেশের পর তাকে নিয়ে যায় পুলিশ। তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।
এতদিন শাহজাহান কোথায় ছিল, তা জানাতে চাননি পুলিশ কর্তা। তিনি বলেছেন, ''আমরা তদন্তের স্বার্থে এটা জানাতে পারছি না। যা বলার আদালতে বলব।''
কেন এতদিন শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হলো না? সুপ্রতিম সরকার বলেছেন, ''শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল। আদালত স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পর গত রাতে মিনাখাঁ থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।''
কলকাতা হাইকোর্ট অবশ্য জানিয়েছে, শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে কোনো স্থগিতাদেশ ছিল না। বরং হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, পুলিশ, ইডি, সিবিআই যে কেউ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারে। এরপরই তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেছিলেন, সাতদিনের মধ্যে শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হবে। তবে অতটা সময় লাগেনি। এক দিনের মধ্যেই শেখ শাহজাহানের খোঁজ পেয়ে গেল পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারও করা হলো।
পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯ৃ-এর মতো অনেকগুলি ধারায় শাহজাহানের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। তার ভিত্তিতে শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ১৪৭, ১৪৮ নম্বর ধারা দাঙ্গা, সশস্ত্র হামলা নিয়ে। আর ১৪৯ ধারা বেআইনি জমায়েত নিয়ে।
কী বলেছেন সুপ্রতিম সরকার?
পুলিশের এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার বলেছেন, "মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, পুলিশ ইচ্ছা করে শাহজাহানকে গ্রেফতার করছে না। আমি জানাতে চাই, এটা ভুল। অপপ্রচার করা হচ্ছে। আমাদের আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল। দিন দুয়েক আগে হাইকোর্টের তরফে যখন স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয় যে গ্রেপ্তারির উপরে কোনও বিধিনিষেধ নেই, তখন আমরা জোরকদমে তল্লাশি শুরু করি। গত রাতে মিনাখাঁ থানার বামনপুকুর অঞ্চল থেকে শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
তিনি বলেছেন, ''সন্দেশখালিতে অনেক মানুষ আসছেন। কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি পুলিশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও উস্কানিমূলক মন্তব্য করছেন।''
তিনি বলেছেন, ''এমন কিছু মন্তব্য করা হয়েছে যাতে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত লাগে এবং ভেদাভেদের বাতাবরণ তৈরি হয়। এটা অত্যন্ত পীড়াদায়ক এবং নিন্দনীয়।”
সিপিএমের সাবেক বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে কি আগে গ্রেপ্তার করে পরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে? সুপ্রতিম বলেছেন, "তারিখ লেখায় ভুল হয়েছে। এটা অনিচ্ছাকৃত। হিউম্যান এরর। এর মধ্যে কোনও অসৎ উদ্দেশ্য বা অভিসন্ধি ছিল না। আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।”
আদালতে পুলিশ যা বলেছে
বসিরহাট মহকুমা আদালতে পুলিশ যে নথি জমা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, শাহজাহান প্রভাবশালী মানুষ। তাকে জামিন দিলে সন্দেশখালি ও ন্যাজাটে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে।
পুলিশ শাহজাহানের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন-অয়োগ্য ধারায় মামলা করেছে।
পুলিশের নথিতে বলা হয়েছে, শাহজাহান জামিন পেলে সাক্ষীদের ভয় দেখাতে পারে, আবার ফেরার হয়ে যেতে পারে। ইডি কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দেয়া, নিগ্রহ করার অভিযোগও পুলিশ করেছে। বলা হয়েছে, ইডি অফিসারদের বিরুদ্ধে যে হাঙ্গামা হয়েছে, তার পরিরকল্পনা করেছিল শাহজাহান।
যেভাবে শাহজাহানকে কলকাতায় আনা হলো
বসিরহাট আদালত থেকে শাহজাহানকে সোজা কলকাতায় গোয়েন্দা পুলিশের সদরদপ্তর ভবানী ভবনে নিয়ে আসা হয়। গোটা রাস্তা ফাঁকা করে দেয়া হয়েছিল। কার্যত গ্রিন করিডোর বানিয়ে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।
বসিরহাট আদালত থেকে শাহজাহানকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি বেরোবার পর তার পিছন পিছন সংবাদমাধ্যমের অনেকগুলি গাড়ি ছিল। কিন্তু রেলগেটের কাছে একটি গাড়ি সেখানে ঢুকে পড়ে। তারপর পুলিশ যতক্ষণে গাড়িটি সরাচ্ছে, তার মধ্যে পুলিশের তিনটি গাড়ি শাহজাহানকে নিয়ে কলকাতায় ভবানী ভবনের দিকে রওয়ানা দেয়।
কেন এইভাবে সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলো, তার কোনো ব্যাখ্যা পুলিশ দেয়নি।
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি যা বললেন
শেখ শাহজাহানের নাম না করে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেছেন, ''এই ব্যক্তির জন্য আমার বিন্দুমাত্র সমবেদনা নেই।''
বৃহস্পতিবার শাহজাহানের আইনজীবীকে দেখার পরই প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনার অপেক্ষাই করেছিলাম।” আপনাকে তো আগামী ১০ বছর আপনার মক্কেলের জন্য ব্যস্ত থাকতে হবে। আপনাকে চার-পাঁচ জন জুনিয়রও রাখতে হবে মনে হচ্ছে।”
আগামী সোমবার সন্দেশখালি মামলার শুনানি হবে। তখন শাহজাহানের বক্তব্যও শুনবে হাইকোর্ট।
সন্দেশখালির মানুষের অভিযোগ
সন্দেশখালির মানুষ, বিশেষ করে নারীরা কিছুদিন ধরে শেখ শাহজাহান ও তার দলবলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, শেখ শাহজাহান ও তার দলবল নারীদের রাতে ডেকে পাঠাত। নারীদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। তারা প্রচুর মানুষের জমি জবরদখল করে নিয়েছে। সেসব জমিতে ভেড়ি বানানো হয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই তারা মানুষকে মারধর করেছে। বাড়ি ভেঙে দিয়েছে। এমনকী তারা মানুষের বিচার পর্যন্ত করত। পুরো এলাকায় তারা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল বলে অভিযোগ।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, আনন্দবাজার)