অতিক্ষুদ্র সামুদ্রিক প্রাণীরা ইঙ্গিত দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের
১০ সেপ্টেম্বর ২০১০রহস্যে ঘেরা এই বিশ্ব৷ বিচিত্র এর প্রকৃতি৷ আর এই বিচিত্রতা নিয়ে প্রতিনিয়তই চলছে গবেষণা৷ সম্প্রতি পশ্চিম অ্যান্টার্টিকের বিশাল বরফ খন্ডের দু'পাশে সাগরের বুকে বিজ্ঞানীরা ক্ষুদ্রাকৃতির বিশেষ ধরণের প্রাণী খুঁজে পেয়েছেন৷
বিজ্ঞানীরা বলতে চাইছেন, এরাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, অতীতে কোনো একসময় অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রের মাঝখানে বিশাল বরফখন্ডগুলো গলে গিয়েছিলো৷ আর তখন এই প্রাণীরা এক দিক থেকে সাঁতরিয়ে আরেক দিকে চলে এসেছে৷ এখন পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকের বরফ পাহাড়ের দু'পাশে রোজ ও উইড্ডেল সাগরবক্ষে ফের দেখা যাচ্ছে এদেরকে৷
সম্প্রতি ‘গ্লোবাল চেঞ্জ বায়োলজি' পত্রিকায় দ্য অ্যান্টার্কটিক গবেষণায় বলা হয়েছে, সামুদ্রিক এই প্রাণীগুলোকে এক ধরণের শৈবাল বলা যেতে পারে৷ খালি চোখে এদেরকে দেখা যায় না৷ কিন্তু একসঙ্গে গুচ্ছাকারে থাকলে এদেরকে প্রবাল কিংবা আগাছার মতো দেখায়৷
পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকে এখনও এত বরফ আছে যে, সেগুলো গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সাড়ে ৩ থেকে ৫ মিটার বেড়ে যাবে৷ কোনো কোনো বিজ্ঞানী ধারণা করছেন, লাখ লাখ বছর আগে বিশ্ব উষ্ণায়নের সময় এই বরফগুলো গলে গিয়েছিলো৷
পশ্চিম অ্যান্টার্টিকের দুই কিলোমিটার পুরু বরফ খন্ডের দু'পাশে ২৪শ' কিলোমিটার ব্যবধানে একই ধরণের এই প্রাণী খুঁজে পেয়ে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের প্রধান লেখক ডেভিড বার্নস বলছিলেন, ‘‘এই ঘটনাটা বড় ধরণের একটা প্রাকৃতিক বিস্ময়৷''
বার্তাসংস্থা রয়টার্স'কে বার্নস আরও বলেছেন, ‘‘প্রাণীগুলোর এই ধরণের সাদৃশ্যের সম্ভবত ব্যাখ্যা এমন হতে পারে, আগে যেভাবে চিন্তা করা হতো তার চেয়ে এই বরফ খন্ড অপেক্ষাকৃত কম দৃঢ় এবং আগে কোনো এক সময় এর কিছু অংশ হয়তো বা গলে গিয়ে থাকতে পারে৷''
তিনি বলছেন, ‘‘সম্প্রতি পশ্চিম অ্যান্টার্টিকের বরফপাহাড় যদি গলতে থাকে, তাহলে আমাদের পুনরায় চিন্তা করা উচিত৷ কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে আবারও এরকমটাই ঘটতে পারে৷''
সংক্ষেপে এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল এরকম - সোয়া লক্ষ বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এখনকার চেয়ে প্রায় ৫ মিটার বেশি ছিলো এবং তাপমাত্রা সম্ভবত বতর্মান সময়ের চেয়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিলো৷ আর লাখ লাখ বছর আগে বিশ্ব উষ্ণায়নের ঘটনা হয়তো বা বেশ কয়েকবার ঘটেছিলো৷
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেলের বিজ্ঞানীরা ২০০৭ সালে একটি প্রতিবেদনে বলেছিলেন, গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন ও জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে ২১০০ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বের তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ থেকে ৬ দশমিক ৪ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে৷
দ্য অ্যান্টার্কটিক গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্রাকৃতির এই প্রাণী বলতে গেলে অনড় অবস্থায় থাকে এবং ছত্রভঙ্গ হলে এদের শুককীটগুলো স্বল্প সময়ে বাঁচে এবং খুব দ্রুত ডুবে যায়৷
বার্নস বলছেন, এটা স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন যে বিশাল বরফের খন্ডের দু'পাশে কী করে একই ধরণের প্রাণী থাকতে পারে! কিন্তু এই বরফপাহাড় হয়তো কখনও গলে গিয়েছিলো৷ আর তখনই এপাশ থেকে ওপাশে যাবার পথ তৈরি হয়েছিলো এবং এর শুককীটগুলি স্রোতে ভাসতে ভাসতে এপাশ থেকে ওপাশে চলে গিয়েছিলো৷
বার্নস-এর এই মন্তব্য এবং গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফল তাই একধরণের সতর্কতাতো বটেই৷ সতর্ক হতে হবে এখনই৷ আমাদের প্রিয় পরিবেশকে বাঁচাতে, আমাদের আশ্রয়দাত্রী পৃথিবীকে বাঁচাতে এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এই জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কালক্ষেপণের অবকাশ আর আমাদের হাতে একেবারেই নেই৷
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়